নেকবর হোসেন কুমিল্লা প্রতিনিধি।
গত রোববার (১৭ অক্টোবর) সকালে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানাধীন মালিখিল গ্রামের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশের পুকুরে বস্তাবন্দি অবস্থায় লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন দাউদকান্দি থানায় খবর দিলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ থানায় নিয়ে যায়। উক্ত বিষয়ে ভিকটিমের ছেলে বাদী হয়ে দাউদকান্দি থানায় অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। বিষয়টি নজরে এলে র্যাব-১১, কুমিল্লা কাজ শুরু করে।
ভিকটিমের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায় ভিকটিম আনোয়ারা বেগম (৪১) গত ১৬ অক্টোন্বর সকালে কাজে যাবার কথা বলে ঘর থেকে বের হয়ে যায় এবং দুপুর আনুমানিক ২টা থেকেই ভিকটিমের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।পরিবারের সদস্যরা আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে ভিকটিমের সন্ধান পায়নি এবং পরবর্তীতে দাউদকান্দি থানার মাধ্যমে ভিকটিমের হত্যার বিষয়টি জানতে পারে।
র্যাব-১১, কুমিল্লা মাঠ পর্যায়ে গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে ভিকটিমের সাথে কুমিল্লা জেলার কোতয়ালি থানার ধনপুর গ্রামের মৃত সেকান্দার আলীর ছেলে মোঃ কানু মিয়া (৫০) এর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল বলে জানতে পারে। কানু মিয়ার অবস্থান সনাক্ত করেত তাকে প্রাথমিক ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার কথাবার্তা সন্দেহ জনক মনে হলে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ১৮ অক্টোন্বর র্যাব-১১, সিপিসি-২, কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে মোঃ কানু মিয়া জানায় যে, আনোয়ারা বেগম (৪১) স্বামী আনার মিয়া , পিতা আলী আশ্রাফ স্থায়ী ঠিকানা গোবিন্দপুর কোতয়ালী কুমিল্লা বর্তমান ঠিকানা শাকতলা উল্টর পশ্চিম পাড়া কোতয়ালী কুমিল্লার সাথে তার দেড় বছরের ও বেশি সময় ধরে বিবাহিত বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল এবং সে আনোয়ারা কে আর্থিক সহায়তা ও ভরণ-পোষন করে আসছিল। ইতোমধ্যে কানু মিয়া জানতে পারে যে, তার সাথে ছাড়াও ভিকটিমের আরো একাধিক লোকের সাথে ঘনিষ্টতা রয়েছে।
বিগত কিছুদিন যাবৎ ভিকটিম বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাবুর্চিদের সাথে রান্না-বান্নার সহযোগী হিসেবে কাজ করত, যা কানু মিয়ার পছন্দ না হওয়া উক্ত কাজ না করার জন্য আনোয়ারাকে নিষেধ করে। কানু মিয়া নিষেধ করা সত্ত্বেও গত ১৫ অক্টোবর শুক্রবার তাঁর স্বচক্ষে আনোয়ারাকে ঐকাজে দেখতে পায় এবং মোবাইল ফোনে কল করে তার অবস্থান জানতে চাইলে সে তার ভাইয়ের বউকে দেখার জন্য হাসপাতালে গিয়েছে বলে জানায়।
এর ফলে আনোয়ারার প্রতি কানু মিয়ার মনে ক্ষোভ ও প্রতিহিংসার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ১৬ অক্টোবর আনোয়ারা কানু মিয়ার মঠপুস্কুরিনী গ্রামের “মাহি ফার্নিচার মার্ট” দোকানে গিয়ে তার বিভিন্ন আর্থিক চাহিদার কথা বললে কানু মিয়া তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়।যার ফলশ্রুতিতে তাদের মধ্যে ব্যাপক কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে কানু মিয়া তার দোকানে ফার্নিচার তৈরীর কাজে ব্যবহৃত “বাটাল” দিয়ে প্রথমে ভিকটিম আনোয়ারার পেটে আঘাত করে ক্ষত-বিক্ষত করে এবং পরবর্তীতে গলায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
কানু মিয়া ভিকটিমের লাশ দোকানে ফার্নিচারের আড়ালে লুকিয়ে রেখে দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে যায় রাত ১০ টায় সময় কানু মিয়া পুনরায় তার ফার্নিচার দোকানে যায় এবং ভিকটিমের লাশটিকে দুইটি বস্তায় ভরে রশি দিয়ে বেঁধে কম্বল দিয়ে প্যাঁচিয়ে লাশটি গুম করার জন্য প্রস্তুত করে কানু মিয়ার একমাত্র ছেলে গাড়িচালক তবে ছেলের সাথে তার সম্পর্ক খারাপ ছিল।
তাই কৌশলে সে তার ছেলের নিকট থেকে সাহায্য নেয়ার জন্য জানায় ,তার কিছু ফার্নিচার আছে যা দ্রুত দাউদকান্দি গিয়ে ডেলিভারী দিয়ে আসতে হবে, তা না হলে ফার্নিচারের ক্রয়কারী তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে বলে হুমকি দিয়েছে। তখন তার ছেলে জানায় যে, সে গাড়ি নিয়ে ওয়ার্কশপে আছে এবং সে রাতের খাবার খায়নি।
তখন কানু মিয়া বলে যে, তুই তর গাড়িটি আমার দোকানের সামনে রেখে বাসায় গিয়ে খাবার খেয়ে আয়, ততক্ষণে আমি মালামাল লোড করে নেই। কানু মিয়ার ছেলে বাবার কথামতো দোকানের সামনে গাড়ি রেখে বাসায় খাবার খেতে গেলে তার অগোচরে কানু মিয়া ভিকটিমের লাশটি গাড়িতে রেখে দেয়। কানু মিয়ার ছেলে খাবার খেয়ে আসলে তারা দাউদকান্দির উদ্দেশ্যে রওনা করে।
পরবর্তীতে রাত আনুমানিক ২টায় দাউদকান্দি থানার মালিখিল গ্রামের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পৌছলে কানু মিয়া রাস্তার ডান পাশে একটি বড় পুকুর দেখতে পেয়ে তার ছেলেকে ফার্নিচারের মালিক এখানেই মাল নিতে আসবে বলে জানায়। তখন কানু মিয়া সুকৌশলে তার ছেলেকে পান আনার কথা বলে রাস্তার ওপর দিকে টং দোকানে পাঠায় এবং এর মধ্যেই সে লাশটি মহাসড়কের পাশের পুকুরে ফেলে দেয়।
তখন তার ছেলে পান নিয়ে আসলে সে মাল ডেলিভারী হয়ে গিয়েছে বলে জানায় এবং তারা বাসায় চলে আসে।প্রাথমিক অনুসন্ধান ও গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে সে নিজেই উক্ত হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে স্বীকার করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১৮ অক্টোন্বর ৯ টার সময় তার ফার্নিচার দোকান থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত “বাটাল এবং তার বাসা থেকে ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে গ্রেফতারকৃত আসামীকে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। অজ্ঞাত হত্যা প্রতিরোধ ও হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে র্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে কলে জানান কুমিল্লা র্যাব-১১, সিপিসি-২, কোম্পানী অধিনায়ক উপ-পরিচালক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন।