এম.জে.এ মামুন।
রাজধানী ঢাকা’র আজিমপুরে মায়ের কবরেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ঢাকা দক্ষিন সিটির ১৬নং ওয়ার্ডের সাবেক সফল কাউন্সিলর “মানবতার ফেরিওয়ালা” জননেতা মোঃ হোসেন হায়দার হিরু।
সোমবার ২৬জুলাই বিকাল সাড়ে তিনটায় দাফন সম্পন্ন হয়। তাঁর ইচ্ছা ছিল মায়ের কবরে যেন তাকে দাফন করা হয়, সে অনুযায়ী আজিমপুরে মায়ের কবরেই তাঁকে দাফন করা হয়েছে। এর আগে দুপুর ১২ টায় আইডিয়াল কলেজ প্রঙ্গনে মরহুমের প্রথম জানাজা এবং বাদ জোহর ধানমন্ডি জামে মসজিদ (ভূতেরগলি বড় মসজিদ) এ দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
মরহুমের জানাজায় অংশ নিতে এবং মরদেহে শ্রদ্ধা জানাতে মহামারী করোনার স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে সহকর্মী, বন্ধুবান্ধব, বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মী ও আত্মীয়স্বজন সহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়। ধানমন্ডি জামে মসজিদে দ্বিতীয় জানাজায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ধানমন্ডি কলাবাগান থানা আওয়ামীলীগ, ঢাদসিক ও মহানগর আওয়ামীলীগ সহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। জানাজার পূূূূূর্বে নেতারা মরহুমের স্মৃতিচারন ও বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, তিনি ছিলেন ধানমন্ডি কলাবাগান থানা এলাকার একজন কৃতি সন্তান এবং কুমিল্লা জেলাস্থ দেবিদ্বার উপজেলার গর্ব। স্বজ্জন, সদালাপী, পরোপকারী, ন্যায়পরায়ণ, মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন প্রয়াত এই ত্যাগী নেতা ছিলেন একজন সাদা মনের মানুষ, সৎ রাজনীতিক,
সময়ের শ্রেষ্ঠ সাহসী সন্তান, দানবীর ও বিশিষ্ট সমাজসেবক। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করেন এবং হয়ে উঠেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া একজন প্রকৃত ত্যাগীনেতা। দলের ক্রান্তিকালে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রয়াত এই মুজিব সৈনিক। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি সর্বদা আপোষহীন ছিলেন।
প্রয়াত এই নেতা ছিলেন, উন্নয়নের রূপকার ও মানবতার ফেরিওয়ালা। সব সময় এলাকার উন্নয়ন এবং অসহায় দরিদ্র মানুষের কথা ভাবতেন। পাশাপাশি দেবিদ্বারে তাঁর গ্রামের বাড়ির এলাকা নিয়েও তিনি গভির ভাবে ভাবতেন এবং কাজ করতেন।
বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ করোনাকালীন সময়ে সমগ্র দেশ জুড়ে যখন প্রথম লকডাউন কর্মসূচি শুরু হয়েছিল। ওই সময়ে যখন দৈনন্দিন খেটে খাওয়া মানুষগুলো দিশেহারা হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছিল। সেই কঠিন দুঃসময়ে দেশের ওই সংকটকালিন মূহুর্তে অসহায় মানুষগুলোর কথা চিন্তা করে দেশের অনেক স্বহৃদয়বান ব্যাক্তি তাদের পাশে দাড়িয়েছে। তাদেরই একজন সদ্য প্রয়াত হোসেন হায়দার হিরু।মানবিকতার এই সংগ্রামে “মানুষ মানুষের জন্য” এই শ্লোগানের মাধ্যমে শুরুথেকে এলাকার সমাজসেবীদের সাথে নিয়ে মানবতার কল্যানে ১৬নং ওয়ার্ডে লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্থ কর্মজীবিদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে দিনের বেলায় তালিকা সংগ্রহ করে পর্যায়ক্রমে ঔষধ, মাস্ক, হ্যান্ড সেনিটাইজার, খাদ্যদ্রব্য, রোজার সামগ্রী, ঈদ সামগ্রী’র প্যাকেট তৈরী করে গভীর রাতে তালিকা অনুযায়ী এসব ত্রান সামগ্রী যার যার ঘরে পৌঁছে দেয়া ও শীতার্ত মানুষদের কম্বল বিতরণ সহ সকল প্রকার সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাতদিন, রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কর্মহীন মানুষের ঘরে ঘরে ছুটেছেন এবং একজন করোনা যোদ্ধা হিসাবে দিনরাত জনগনের পাশে থেকে খাদ্য, নগদ অর্থ ও সচেতনতা তৈরীর কাজ করেছেন। তাঁহার গুনাবলী বলে শেষ করা যাবেনা।
বক্তারা আরও বলেন, সত্যিই, বড় অসময়ে চলে গেলেন আপনি, বঞ্চিত হলো সমাজ, বঞ্চিত হলো মানবতা। আপনার কাছে থেকে দেখেছি, কিভাবে নিজের সর্বস্ব দিয়ে মানুষের উপকার করতে হয়। কিভাবে একজন আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ হয়েও আমৃত্যু ক্লিন ইমেজের অধিকারী হওয়া যায়। কেমন করে নিজেকে সাধারণ মানুষ গুলোর হৃদয়ের গভীরে স্থান করে নিতে হয়। এই হাতিরপুল, ভূতেরগলি, গ্রীনরোড, কলাবাগান, ধানমন্ডি সহ ঢাকাবাসী সহ আপনার সকল পরিচিতজনরা আপনাকে আজীবন মনে রাখবে। আমরা আপনার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
প্রসঙ্গত, প্রয়াত হোসেন হায়দার (হিরু) রবিবার ২৫জুলাই বিকাল পৌনে পাঁচটায় ঢাকার কমফোর্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। “ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন”।মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫বছর। তিনি ফুসফুস সংক্রমণ জনিত সমস্যায় ভোগছিলেন।
তিনি ৩১জুলাই ১৯৫৬ সালে রাজধানী ঢাকার ২৪/১, নর্থ রোড, ভূতের গলি ঢাকা-১২০৫ পৈত্রিক নিবাসে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা দেবিদ্বার উপজেলায়। তাঁর পিতা: মরহুম হাজী আবদুল হালিম(অব: কাস্টমস্ কর্মকর্তা), মাতা: মরহুমা নছিবা খাতুন। স্ত্রী নাছরিন বেগম।দাম্পত্য জীবনে তিনি এক মেয়ে ও এক ছেলের জনক। মেয়ে ডাঃ সাবিহা হায়দার তিথি এবং ছেলে জুলফিকার হায়দার তনয়।