আজ ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪, দুপুর ১২:৩৭
মাদকের আখড়া

দুই বাংলায় মাদকের গডফাদার কুমিল্লার পিচ্চি আমজাদ

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অব্যাহত তৎপরতার মধ্যেও মাদকের ভয়াল ছোবল কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না ভারত-কোতয়ালী সীমান্তে। কুমিল্লা জেলার আদর্শ সদর উপজেলার ৫নং পাঁচথুবী ও ৪নং আমড়াতলী ইউনিয়নে চলছে মাদকের গডফাদারদের রাজত্ব। এলাকার স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন সহ প্রশাসনের অসাধু কয়েকজন কর্মকর্তাদের ছত্রছায়ায় এই এলাকাগুলো দিয়ে সিংহভাগ মাদক ও অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট পাচার হচ্ছে দিনে দুপুরেই। এরপর চলে যাচ্ছে দেশের এপ্রান্ত থেকে ঐপ্রান্তে।

“হয় মাদক ছাড়ো নইলে কুমিল্লা ছাড়ো” স্লোগানে কুমিল্লার বর্তমান সুযোগ্য পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ পিপিএম (বার) এর দিক নির্দেশনায় পরিচালিত সুচারু অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে এলাকার শতাধিক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। উদ্ধার করা হয়েছে বিপূল পরিমান গাজা, ফেনসিডিল ও ইয়াবা। মাদক বিরোধী কর্মকান্ডে কোনঠাসা হয়ে নানা অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে এলাকার একটি চক্র।

এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার সহ স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য অনুযায়ী, সুনির্দিষ্ট একটি গ্যাঙের মাধ্যমে প্রায় ১০ কিলোমিটার বিস্তীর্ণ সীমান্তপথে ভারত থেকে আসা মাদকের একটা বড় অংশই চালান হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায়। এতে বিভিন্ন জেলা-উপজেলার হাটবাজার ও লোকালয়ে গড়ে উঠেছে মাদক কেনা-বেচার আখড়া। মাদক বিস্তারের সঙ্গে প্রভাবশালীদের মদদ এবং পৃষ্ঠপোষকতাও রয়েছে বলে বিভিন্ন মহলের অভিযোগে জানা গেছে। তাদের অভিযোগ, ইলিয়টগঞ্জ থেকে এসে সদর উপজেলার ৪নং আমড়াতলী ইউনিয়নের গাবতলী গ্রামে ভারতের বর্ডার ঘেষে বাড়ি করে মালেক। তার ছেলে এমদাদুল হক ওরফে আমজাদ (২৮), এমরান (৩১) এবং হান্নান (৩৮) তাদের বর্ডার ঘেষা বাড়িকে গড়ে তুলেছে মাদক কারবারীর হেডকোয়ার্টার। তারা দেশ থেকে এখন দাপিয়ে বেরাচ্ছে ভারতেও।

মাদকের গডফাদার কুমিল্লার পিচ্চি আমজাদ
মাদকের গডফাদার কুমিল্লার পিচ্চি আমজাদ

তাদের তিনজনের নামেই দেশের বিভিন্ন থানা সহ ভারতেও রয়েছে একাধিক মাদক মামলা। রাঘব বোয়ালদের ছত্রছায়ায় সর্বোচ্চ দু সপ্তাহ থেকে এক মাসের মধ্যেই আইনের ফাক ফোকর দিয়ে এসব মামলা থেকে পার পেয়ে যাচ্ছে তারা তিন ভাই। অত্যন্ত গরীব ঘরের সন্তান হলেও অল্প কিছুদিনের মধ্যেই অবৈধ মোবাইল আর মাদক ভারত থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে এখন আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে আমজাদ, এমরান ও হান্নান। আপডেট মডেলের গাড়ীতে করে ঘুরে বেড়ায় আমজাদ ও তার সাঙ্গোপাঙ্গো। ভারতে তার রয়েছে অপ্পো, রিয়েলমি শাওমি সহ নামিদামি ব্র্যান্ডের মোবাইলের শোরুম। ভারতের বিভিন্ন শোরুম থেকে এই মোবাইল গুলো নিয়ে আসে তার নিজস্ব শোরুমে। জানা গেছে এই শোরুম থেকেই বাংলাদেশে অবৈধ মোবাইল গুলো চালান করা হয়।

আমজাদের পাচার করা ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাজা, এস্কাফ ও অবৈধ মোবাইলের চালান বাংলাদেশে থেকে নিয়ন্ত্রন করে তার ভাই এমরান ও হান্নান ছাড়াও দুতিয়ার দিঘীর পাড় এলাকার ফুলমিয়ার ছেলে ডজন খানেক মাদক মামলার আসামী নুরু (৪০), নুরুর আপন ছোট ভাই সিএনজি চালক রফিক (৩২), গাবতলী গ্রামের মাহে আলম (২৮), জামবাড়ী গ্রামের মৃত সুলতান মিয়ার ছেলে মাশুক, মোস্তফার ছেলে জাবেদ, পাঁচথুবী ইউনিয়নের এমিল, নাসির, জহির, অলি, শাহীন, উত্তর জামবাড়ীর মৃত ময়নাল মিয়ার ছেলে ফারুক ও কামরুল সহ আরও অনেকে। ২০২০ সালের শেষের দিকে “লাশবাহী ফ্রিজিং এম্বুলেন্সে করে ফেনসিডিল পাচারকারী ঢাকায় গ্রেফতার” শীর্ষক সাড়া জাগানো খবরটিও ছিলো এই গ্যাঙদেরই।

জানা গেছে ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটককৃত এই চালানটি আমজাদের মাধ্যমে ভারত থেকে কুমিল্লার বর্ডার দিয়ে পাচার হয়ে আমজাদ বাহিনীর সদস্য এমিলের মাধ্যমে মৃত লাশের আদলে কাফনের কাপড়ে পেচিয়ে লাশবাহী প্রিজন ভ্যানের মাধ্যমে ঢাকার কেরানীগঞ্জ যাওয়ার পথে বঙ্গবাজার এলাকায় এমিল সহ ৬ জন গ্রেফতার হয়। ধরা ছোয়ার বাহিরেই থেকে যায় গডফাদার আমজাদ ও তার আপন দুই ভাই।

ছত্রখীল পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ শেখ মফিজের অভিযানে ২ হাজার পিছ ইয়াবা সহ আটক পিচ্চি আমজাদ

সংশোধিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ এর ৯ ধারায়, ইয়াবা সরবরাহ, বিপণন, কেনা-বেচা, হস্তান্তর, গ্রহণ-প্রেরণ, লেনদেন, সংরক্ষণ, গুদামজাতকরণ ও প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড এমনকি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়ার কথা বলা আছে। গাঁজা বা ভাং গাছের তৈরি মাদকের পরিমাণ ৫ কেজি বা তার কম হলে ৬ মাস থেকে ৫ বছরের, ৫ কেজি থেকে ১৫ কেজির মধ্যে হলে ৫ থেকে ৭ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড এবং মাদকের পরিমাণ ১৫ কেজির বেশি হলে ৭ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদন্ড দেওয়ার কথা বলা আছে। কিন্তু আমজাদ বাহিনীর বিভিন্ন সদস্যরা বিভিন্ন থানায় গাজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল, এস্কাফ সহ আটক হয়ে জেল হাজতে গেলেও বেরিয়ে আসতে সময় লাগে একদিন থেকে সর্বোচ্চ একমাস। তাদের দস্যূতার কাছে আইন যেন কিছুই নয়।

ভারতে অর্ধকোটি টাকার গাড়ীতে করে ঘুরে বেড়ায় মাদকের গডফাদার আমজাদ

মে ২০২১ এ ছত্রখীল ফাড়ীর ইনচার্জ শেখ মফিজ এর চালিত অভিযানে আমজাদ বাহিনীর মুল গডফাদার আমজাদ ২০০০ পিছ ইয়াবা সহ আটক হয়ে জেল হাজতে গেলেও এক মাসের মধ্যেই জামিনে বেরিয়ে এসে জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। এলাকার লোকজন তাদের এরকম দাপট দেখে আতঙ্কিত বিধায় মুখ খুলতে চায়নি কেউই। তারা আটক হওয়ার পর শুধু ছাড়া পেয়েই ক্ষান্ত হয়না, প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের মদদে এলাকার নিড়ীহ মানুষদের ষড়যন্ত্র করে জেল জড়িমানা সহ নানাভাবে হয়রানী করে ব্যহত করে তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপন।

খবরের সন্ধানে
ভারতে বিপুল পরিমানের ইয়াবা সহ আটক হয় পিচ্চি আমজাদ

৪নং আমড়াতলী ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হকের কাছে আমজাদের বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি বলেন আমজাদ মাদক ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত শুধু তাই নয় সে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা সহ ভারত পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। পরবর্তীতে আমজাদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে প্রথমে সে পরিচয় পাল্টে হোসেন নামে পরিচয় দিলেও এক পর্যায়ে খবরের সন্ধানকে জানায় তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ গুলো সম্পূর্ণ মিথ্যে ও বানোয়াট।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০