নেকবর হোসেন কুমিল্লা প্রতিনিধি।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে রোবট তৈরির উৎসবে মেতেছে শিক্ষার্থীরা হাতেকলমে রোবট তৈরির প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা বিকাশে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রোবট তৈরির উৎসবে মেতেছে শিক্ষার্থীরা। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জেলা জুড়ে উদ্ভাবক ও গবেষক তৈরির এ উদ্যোগ নিয়েছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায় ইতোমধ্যে জেলার ১৭ উপজেলায় গড়ে উঠেছে রোবটিক্স ও প্রোগ্রামিং ক্লাব। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের অর্থায়নে নগরীর ২৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির ৭২৫ জন শিক্ষার্থী ও ৩৯ জন শিক্ষক বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) কর্মশালায় বিভিন্ন ধাপে অংশ নিয়েছেন। প্রশিক্ষিত জ্ঞান দিয়ে এরমধ্যে স্কুল শিক্ষার্থীরা তৈরি করেছেন রোবট। এছাড়াও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচতলায় একটি ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে প্রিন্ট করা হচ্ছে রোবটের থ্রিডি যন্ত্রাংশ। এ ল্যাব থেকে শিক্ষার্থীদের তৈরি প্রথম রোবটটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রবেশদ্বারে থাকবে। এটি সেবা প্রার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য দেবে।
সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীদের তথ্য ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষায় এগিয়ে নিতে ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে জেলার ১৭ উপজেলায় বিজ্ঞান বিষয়ক কুইজ, বিতর্ক, বিজ্ঞান প্রকল্প প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন জেলা প্রশাসন। এর আলোকে জেলা প্রশাসক কুমিল্লায় রোবটিক্স ও প্রোগ্রামিং ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। ওই ক্লাবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রথমে তিনদিনের কর্মশালায় অংশ নেন। পরে তাদের অর্জিত জ্ঞানের ওপর একটি পরীক্ষাও নেওয়া হয়। এতে ১২০ জন শিক্ষার্থীকে মনোনীত করে তিনটি গ্রুপে ১০ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
জেলার প্রতিটি উপজেলার ইউএনও ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে রোবটিক্স ও প্রোগ্রামিং কমিটি। তারা উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থীকে বাছাই করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন। এতে জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে রোবটিক্স ও প্রোগ্রামিং উৎসব।
কর্মশালায় অংশ নেওয়া নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী আবিদা ইবনাত সারা জানায়,রোবটিক্স ও প্রোগ্রামিং কর্মশালায় আমাদের বেসিক ধারণা দেওয়া হয়েছে। সেখানে যা শিখেছি ভবিষ্যতে রোবটিক্স এবং প্রোগ্রামিংয়ে উচ্চতর শিক্ষায় কাজে আসবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে আমরাই বিশ্বের নেতৃত্ব দিতে পারবো।
কুমিল্লা জিলা স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র আবদুল্লাহ আল রামিম জানায়, জিলা স্কুলের বিজ্ঞান ক্লাবের পক্ষ থেকে আমরাই বাংলাদেশে স্কুল পর্যায়ে প্রথম মানব সদৃশ রোবট তৈরি করেছি। রোবটটির নাম দিয়েছি হাইডার। মানুষের বিভিন্ন ধরণের অঙ্গভঙ্গি কপি করাসহ বিভিন্ন কাজ করা যাবে। এছাড়াও নেট থেকে যে কোনো তথ্য সংগ্রহ করে মানুষকে সরবরাহ করবে।
কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নার্গিস আক্তার বলেন, যে সময় শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তির অপব্যবহারের দিকে ঝুঁকেছিল ঠিক সেই সময়ে জেলা প্রশাসক নিয়েছেন এক কার্যকরী পদক্ষেপ। শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তুলছেন দক্ষ মানব সম্পদে। তার এ উদ্যোগ জেলা জুড়ে প্রশংসিত হয়েছে। নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোকসানা ফেরদৌস মজুমদার বলেন, যারা পরের জেনারেশনকে এগিয়ে নিয়ে যাবে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান নিজ উদ্যোগে নগরীর বিভিন্ন স্কুল থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের বাছাই করে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন।
কুমিল্লা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাশেদা আক্তার বলেন, এ স্কুলের বিজ্ঞান প্রজেক্ট ক্লাবের সদস্যরা একটি রোবট ও ড্রোন তৈরি করেছেন। এ রোবট শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ভূমিকা রাখতে পারবে। স্কুল শিক্ষার্থীদের রোবট তৈরি দেশে এটিই প্রথম।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান শিক্ষায় উৎসাহিত এবং প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিতি করতে এ উদ্যোগ নিয়েছি। এতে এ শিক্ষার্থীরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশকে প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি চতুর্থ শিল্প বিপ্লব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা রোবটিক্স, প্রোগ্রামিং এবং সফটওয়ার তৈরির মাধ্যমে যেমনি আর্থিক সচ্ছলতা আনতে পারবো তেমনি তা রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করতে পারবো।