আবদুল্লাহ আল মামুন:
ফেনীর দাগনভূঞায় ১৯৯২ সাল থেকে এখনও ফুল ও ফলের বাগান করে আসছেন মোঃ মহিন উদ্দিন। মহিন গার্ডেন এন্ড নার্সারী মালিক মহিন উদ্দিন ৪০ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে নার্সারি করেছেন। এই নার্সারি মালিককে নিয়ে লিখেছেন ও ছবি তুলেছেন আবদুল্লাহ আল মামুন।
ফুল ভালবাসেন না জগতে এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার। সাধারণত কোনো অনুষ্ঠান এবং দিবসগুলোতে কাঁচা ফুলের চাহিদা বেড়ে যায় অনেকগুণ। অদম্য উৎসাহে ক্লান্তিহীন পরিশ্রমও যেন হার মানে তাদের কাছে যখন ফুলে ফুলে ভরে যায় গোটা বাগান। তিনি ১৯৯২ সালে ক্ষুদ্র পরিসরে বিভিন্ন জাতের গাছের চারা কিনে এনে দাগনভূঞা বাজারে ভ্যানগাড়ী করে বিক্রি করতেন। পরে নার্সারির মালিক হন। পরে ফুল বাগানও শুরু করলেন মহিন উদ্দিন। প্রথমেই।
নিজ বাড়ির দরজায় থেকে পরে দাগনভূঞা একাডেমী রোড (বর্তমান স্বপন হোটেল)সংলগ্ন পাশের জমিতে এ ফুল ও ফলের বাগান শুরু করেন। এখন তিনি দাগনভূঞা পৌর এলাকার (৯ নং ওয়ার্ড) আমান উল্যাহপুর দাসপাড়া (দাগনভূঞা ক্যাডেট দাখিল
মাদ্রাসা) সংলগ্ন স্থানে ৪০ শতাংশ জমিতে এ ফুল ও ফলের বাগান করে আসছেন। ভালো লাগতে শুরু করল আরও গোলাপ, রজনীগন্ধাসহ বাহারি নানা ধরনের ফুল। যখনই সময় পেতেন, বাগান নিয়ে পড়ে থাকতেন। ফলে বাগানটি বড় হতে লাগল, তারও ফুলের প্রতি ভালোবাসা বাড়তে লাগল। ধীরে ধীরে আশপাশের মানুষ, পরিচিতরা ফুল নিয়ে যেতে লাগলেন। কখনো কোনো উপহারের বিনিময়ে ফুল বিলিয়ে দিতেন। তবে বাগান বাড়তে বাড়তে তাকেও সাহসী করে তুলল। দিন-রাতের পরিশ্রম আরও স্বপ্ন দেখাতে।
লাগল। বললেন, ‘মানুষের পরামর্শ, ভালোবাসা পেয়ে, ফুলে মুগ্ধ হয়ে পরিশ্রমের কোনো কার্পণ্য করিনি। রাত-দিন খেটেছি।’ তাতেই ঘুরে দাঁড়ালেন। পেশা হিসেবে নিলেন পুরোপুরি। নার্সারিই তার জীবিকা।
তবে এখনও অন্যের জমি লিজ নিয়ে নার্সারি করেন তিনি। বাগান মালিক মহিন উদ্দন বলেন, তিনি নিজেই জায়গা কিনে নিজের জায়গায় বাগান করবেন বলে জানান। পুরো বাগান তার মতোই সমৃদ্ধ। অনেক টাকা খরচ করেছেন বাগানের পেছনে। সবই নার্সারির আয় থেকে পাওয়া। আলাদা আইল তৈরি করেছেন প্রতি জাতের গাছের জন্য। নিয়মিত সেগুলোর পরিচর্যা করতে কয়েক জন শ্রমিক আছেন ভালো মাইনেতে। তারা ভালো ও পরিষ্কার পোশাক পরে কাজ করেন।
পরিবেশ উপযোগী এই বাগানে শীত, বর্ষা, অতি গরমের হাত থেকে চারাগাছগুলোকে বাঁচানোর জন্য ব্যবহার করছেন পাতলা দামি কাপড়ের সারি; পাশেও আছে তেমন। মাঝে পানির জন্য নিচু একটি জমিও রেখেছেন। পাশে আলাদা আইলগুলোকে চারপাশে বেঁধে দিয়েছেন। অনেক বৃক্ষপ্রেমিকের পা পড়েছে দাগনভূঞা উপজেলার পৌর এলাকার উদরাজপুর গ্রামের ওমদ আলী মুন্সী বাড়ীর মৃত ফজলুল হকের ছেলে মহিন উদ্দিনের।
নার্সারিতে। পরামর্শক, আগ্রহী গাছপ্রেমিকরা নার্সারিতে এসে বা প্রয়োজনে যেসব পরামর্শ দিয়েছেন, সেগুলো বাস্তবায়ন করেছেন। এখনো তাই। তবে নেই বাগানের চারা ও গাছের পরিচর্যার কোনো উন্নত প্রযুক্তি। বাগানের পেছনে লেগে থাকতে থাকতে স্বশিক্ষিত হয়ে গিয়েছেন এই নার্সারির মালিক। নানা সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যান কর্মশালাগুলো করেছেন। তাদের সাহায্যও
নিয়েছেন, যখন প্রয়োজন। চারাগুলো বড় যতেœ লালিত হয় সেখানে। আলাদা করে কম্পোস্ট সার তৈরি করেন। সেগুলোর জন্য আলাদা বক্স আছে, রাখার জন্য আলাদা গুদাম আছে।
চারাগুলো রাখেন তিনি জালি দেওয়া উঁচু স্থানে। একেবারে ছোট থেকে সেগুলো ভালোভাবে বিক্রির উপযোগী করে বিক্রি করেন। অনেকগুলো মাটির টবের সারি বানিয়েছেন ওদের জন্য। জমিতে জন্মানো, গাছের টবে বড় হওয়া- সবই বৈজ্ঞানিক উপায়ে হয়। কোনো অন্যথা হওয়ার উপায় নেই। ফলে নিশ্চিন্তে দাগনভূঞা উপজেলা সহ বিভিন্ন দূর-দূরান্তের কৃষক, নার্সারি মালিক, শৈখিন বৃক্ষপ্রেমীরা নানা জাতের সবজি ও বাহারি ফুল তার নার্সারি থেকে চারা হিসেবে নিয়ে জমি
চাষ করছেন। এভাবেই কৃষিখাতে উল্লেখযোগ্য ও অনুকরণীয় অবদান রাখছেন।
মহিন গার্ডেন এন্ড নার্সারির মালিক মহিন উদ্দিন। মানুষের উৎসাহ আর ভালোবাসায় আরও সাহস এবং প্রেরণা পান তিনি। ভালোবাসার নার্সারিতে বেশি সময় দিতে
থাকলেন। চারা ও বীজগুলোকে সন্তানের মতো যতœ করা বাড়িয়ে দিলেন। পরিশ্রমের পাশাপাশি লাভও বাড়তে লাগল। মহিনকে প্রশ্ন করলে পলিথিনে ফুল, ফল ও সবজির বীজ রাখলে, চারা তৈরি করলে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হয়।
তেমনি গাছেরও ক্ষতি হয়। নানা ধরনের মাটিতে মিশে থাকা ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া তাদের দুর্বল করে দেয়। ফলে নতুন উদ্ভাবন করেছেন কি? জানতে চাইলে মহিন বলেন, ইউটিউবে দেখেছি ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া থেকে চারা গুলোকে বাঁচাতে নারকেলের ছোবড়া গুঁড়ো করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া থেকে বাঁচানো সম্ভব। তিনি আরও বলেছেন অত্যাধুনিক প্রযু্িক্তর যন্ত্রপাতি অনেক ব্যয়বহুল তা কেনা সম্ভব হয় না। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
এই বাগানের জন্য তিনি উন্নত প্রজাতির ‘গোলাপ’, ‘জারবেরা’ ফুল, ‘স্ট্রবেরি’ ফল এবং এখনই তার নার্সারিতে বেশ কয়েকটি আলাদা জাতের ও রঙের
গোলাপ গাছ জন্মাচ্ছে। গাছের দন্ডগুলোও বড়। উপজেলা সহ বিভিন্ন জায়গায় থেকে তার নার্সারিতে ফুল ও ফলের চারাসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। বাগানে গন্ধরাজ, বেলি, প্রেমনলিনী, কামিনী, চেরি,
জেসমিন, অলকানন্দা, বাগানবিলাস, চায়না গোলাপ, রোজ, চায়না টগর, বকুল, শিউলি, হাস্নাহেনা, রঙ্গন, মাধবীলতা, ডালিয়া, পর্তুলেকা, দোলনচাঁপা, পাম লিলি এবং মালটা, কমলা, আম, কাঁঠাল, লিচু, নারিকেল, বাতাবি লেবু ও বিভিন্ন প্রকারের ওষধী গাছ সহ উন্নতজাতের গাছ রয়েছে। বাগান মালিক মহিন আরও বলেন,।
আগামীতে বিভিন্ন প্রকারের শীতকালীন সবজির মধ্যে শিম, বাঁধাকপি, ফুলকপি, গাজর, মটরশুঁটি, মুলা, পালংশাক, ওলকপি, লালশাক, লাউশাক, করলা, বেগুন, টমেটো, বরবটি, আলু সহ নানা ধরণের সবজি চাষ করবেন বলে জানান এ বাগান মালিক মহিন উদ্দিন।