ইয়াছিন আরাফাত।
কুমিল্লার চান্দিনা পৌরসভার অধিকাংশ সড়কের উদ্বোধনের ৬ মাসেই বেহাল দশা। ফলে মানুষের যাতায়াত বিঘ্নিত হচ্ছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি এলেই জনজীবন হয়ে পড়ে বিপর্যস্ত।
অধিকাংশ সড়কগুলোর সংস্কার করার ৮ মাস অতিবাহিত হতে না হতেই পুরোনো চেহারায় ফিরে যায়। আবার কিছু সড়কের কাজ শেষের মাত্র ৬ মাস পার হতেই বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সড়কগুলোর অধিকাংশ স্থানেই খানাখন্দ সৃষ্টি হয়। যে কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগে পড়ছে সাধারণ মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেহাল সড়কগুলোর মধ্যে চান্দিনা উপজেলা ও পৌর সদরের প্রধান সড়কটি অন্যতম। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চান্দিনা উপজেলার কাঠেরপুল থেকে পালকি সিনামা হল পর্যন্ত পুরো সড়কটিতে অগণিত গর্ত হয়ে গিয়েছে। তবে আরসিসি ঢালাই অংশটি ভালো রয়েছে। কার্পেটিং (পিচ ঢালা) অংশটিতেই বেশি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। চান্দিনা খাদ্য গুদাম ও হাসপাতালের সামনের অংশটিতে কমপক্ষে ১২টি স্থানে বড় গর্ত হয়ে সড়কের এক পার্শ্বে দিয়ে যানবাহান চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
এই সড়কের উপর দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ উপজেলা প্রশাসন, থানা, ভূমি, সাব রেজিষ্ট্রি অফিস, হাসপাতাল ও স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করছে। ফলে এই সড়কটি অত্যন্ত জন গুরুত্বপূর্ণ।
পথচারী মো. মিজান জানান, পালকি সিনামা হল থেকে চান্দিনা বাজার অংশে কোন যানবাহন নিয়ে প্রবেশ করতে রাজি হন না চালকরা। সরকারি হাসপাতাল সংলগ্ন সড়ক হওয়ায় এই সড়কটি ব্যবহার করছে পাশ্ববর্তী দেবিদ্বার ও বরুড়া উপজেলার বাসিন্দারাও। জরুরি মুহূর্তে মুমূর্ষু রোগী নিয়ে এসে বিপাকে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
উপজেলা সদরের সাথে সংযোগ সড়ক চান্দিনা-বরকইট ও চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ ডিগ্রি কলেজ রোড দুটি সংস্কারের ৬ মাস অতিবাহিত হওয়ার আগেই বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
এছাড়া চান্দিনা মোকামবাড়ি, ফায়ার সার্ভিস হয়ে পূর্ব বেলাশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত আধা কিলোমিটার সড়কটি প্রায় ৩ বছর ধরে যানবাহন চলাচল অনুপযোগী হয়ে আছে। বড় গর্ত, খানা-খন্দে ভরপুর এই অংশটি। সামান্য বৃষ্টিতেই গর্তে পানি জমে যায়। এ অবস্থায় যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন বেশ ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হয়।
অপরদিকে এসকল সড়কের দূরাবস্থার কারণে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বেহাল দশার এ সড়কগুলো দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন বলে দাবি স্থানীয়দের।
সিএনজি চালক মো. জহির জানান, চান্দিনা বাজার থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভাঙা। গর্তগুলোতে গাড়ির চাকা পড়লে আর উঠানো যায় না। গর্তে পরে আমার গাড়ির কয়েকটি পার্টস ভেঙে গিয়েছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, শুনেছি হাসপাতাল সড়কের অংশের কাজ বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে করা হয়েছে। বছর শেষেই সড়কের এমন বেহাল দশায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
এদিকে পৌরসভার প্রধান কয়েকটি সড়ক দিয়ে ভারী যানবাহন, মাছ ও মাছের খাদ্যাবাহী কভার্ডভ্যান-পিকআপ চলাচলের কারণে কিছুদিন পর পর সড়ক নষ্ট হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। যে কারণে সড়কে আরসিসি মানের কাজ করার জোর দাবি জানিয়েছেন পৌরসভার বাসিন্দারা।
এব্যাপারে চান্দিনা পৌরসভার সহকারি প্রকৌশলী মো. শাহিন সার হোসেন জানান, ভারী যানবাহন চলার কারণে এসকল সড়ক টেকসই হয় না। এগুলো আরসিসি মানের সড়কে উন্নত করার পরিকল্পনা চলছে।
চান্দিনা পৌরসভার মেয়র মো. শওকত হোসেন ভূঁইয়া জানান, পিচ ঢালা রাস্তা থেকে আরসিসি রাস্তা টেকসই হয়। আমরা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে আরসিসি রাস্তা করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। দুই-এক দিনের মধ্যেই ভাঙা অংশগুলো রিপেয়ারিং করা হবে।