লেখক মুহাম্মদ সামছুল আলম।
আজ ১৫ আগস্ট। ৩১শে শ্রাবণ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ, ৬ই মহররম ১৪৪৩ হিজরি। কারবালার ঘটনা ইসলামিক পঞ্জিকা অনুসারে ১০ মুহাররম ৬১ হিজরী মোতাবেক ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান লেখক মুহাম্মদ সামছুল আলম কারবালা নামক প্রান্তরে সংগঠিত হয়েছিল। আগামী ১৯শে আগষ্ট ১০ই মুহররম কারবালা দিবস। মুসলমানদের শোকাবহ এ দিন।
সেদিন ইয়াজিদ সৈন্যদের হাতে হযরত হোসাইন এর পরিবারেরই ১৮ জন সদস্য শাহাদাৎ বরণ করেন। প্রতিটি মুসলমান কারবালার ঘটনায় যেমন শিহরিত হন তেমনি প্রতিটি বাঙ্গালী ১৫ ই আগষ্টে বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্ব পরিবারে।
ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের নিজ বাসায় সেনাবাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সেনাসদস্যের হাতে নিহত হওয়ার ঘটনায় শিহরিত হন তিনি ছাড়াও ঘাতকের বুলেটে নিহত হন তার স্ত্রী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ৷ এছাড়াও তাদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনসহ নিহত হন।
আরো ১৬ জন ৷ ১৫ আগস্ট নিহত হন মুজিব পরিবারের সদস্যবৃন্দ: ছেলে শেখ কামাল; শেখ জামাল ও শিশু পুত্র শেখ রাসেল; পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজী কামাল; ভাই শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগনে শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণি ৷ বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসেন কর্নেল জামিলউদ্দীন, তিনিও তখন নিহত হন ৷
দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোটবোন শেখ রেহানা এয়াজিদ সৈন্যদের হাতে কারবালায় হত্যকান্ডে ইমাম হুসাইন (আ.)’র পুত্র ইমাম জয়নুল আবেদীন ও তার বোন ইমাম জয়নুল আবেদীন এর ফুফু জয়নাব অলৌকিক ভাবে বেচে যান এবং এয়াজিদের সৈন্যদের হাতে বন্দি হন।
কারবালার ঘটনার পর ইমাম জয়নুল আবেদীন ও জয়নাব যদি জীবিত না থাকতেন তাহলে কারবালার শহীদদের আত্মত্যাগ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংঘটিত ঐ বিপ্লবকে নিছক একটা দুর্ঘটনা বলে প্রচার করার ইয়াজিদী চক্রান্ত সফল হতো উমাইয়া শাসকরা তখন এটাও প্রচার করতো যে ইমাম হুসাইন (আ.) ইয়াজিদের মতো তাগুতি শাসকের শাসন মেনে নিয়েছিলেন।
আর এর ফলে পবিত্র ইসলাম ধর্মকে অবিচারের ব্যাপারে আপোসকামী ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্রও সফল হতো। আসলে মহান আল্লাহই এভাবে তাঁকে মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব দেয়াসহ কারবালার কালজয়ী বিপ্লবের পরবর্তী অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করা ও এ বিপ্লবের প্রকৃত বাণী মুসলমানদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্যে জীবিত রেখেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুকে স্ব পরিবারে হত্যা করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলই খুনিদের লক্ষ্য ছিল না। এটি ছিল মূলত একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের আন্তর্জাতিক দোসরদের সুগভীর চক্রান্তে সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। টার্গেট ছিল এই দেশ থেকে চিরতরে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস সব মুছে দেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় পরিচালিত করা।
এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের আইনি ব্যবস্থা থেকে শাস্তি এড়ানোর জন্য বিশ্বাসঘাতক মোশতাক আহমেদ ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫ সালে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ প্রণয়ন করে দেশের বাহিরে থাকায় আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে ১৯৮১ সালে দীর্ঘ ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে আওয়ামী লীগের সভাপতির গুরুদায়িত্ব নিয়ে স্বদেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী, কালজয়ী নেতৃত্বে সেই অমানিশার ঘোর কাটিয়ে আমরা আলোর পথের দেখা পেলাম। বাতিল হলো কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। বিচারের আওতায় আনা হলো খুনিদের। বাঙালি মুক্তি পেল পিতৃহত্যার কলঙ্ক থেকে। শুরু হলো আমাদের নতুন আলোয় পথচলা।
সেদিন জননেত্রী শেখ হাসিনা বেচে না থাকলে এবং পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে না পারলে বাঙ্গালী জাতী জানতে পারতোনা স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস। বিকৃত ইতিহাস নিয়ে এ জাতীকে বিভ্রান্ত করে রেখেছিল খুনির পৃষ্ঠপোষকেরা।
(লেখক মুহাম্মদ সামছুল আলম)
(এডভোকেট জজ কোর্ট কুমিল্লা।)