আজ ৭ই মে, ২০২৪, রাত ৪:১২

সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত সিন্ডিকেটের মূল হোতাসহ ৩জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৪।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

কাল্লু নাগিন সোহাগ মামা ভাগিনা কালা নাগিন সিন্ডিকেটের মূল হোতাসহ ৩জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৪।

এলিট ফোর্স হিসেবে র‌্যাব আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই আইনের শাসন সমুন্নত রেখে দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার লক্ষে অপরাধ চিহ্নিতকরণ, প্রতিরোধ, শান্তি ও জনশৃংখলা রক্ষায় কাজ করে আসছে। সাম্প্রতিককালে প্রতারণামূলক ফাঁদে ফেলে উচ্চ বেতনে লোভনীয় চাকুরীর প্রলোভনে নারী পাচারে জড়িত রয়েছে কয়েকটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। জঙ্গীবাদ, খুন, ধর্ষণ, নাশকতা এবং অন্যান্য অপরাধের পাশাপাশি এসব ঘৃণিত মানবপাচারকারী চক্রের সাথে সম্পৃক্ত অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র‌্যাব সদা সচেষ্ট।


গত মে ২০২১ মাসে পার্শ্ববর্তী দেশে বাংলাদেশের এক তরুণীর পৈশাচিক নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রেক্ষিতে র‌্যাব পার্শ্ববর্তী দেশে মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা বস রাফিসহ চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করে। এহেন মানব পাচারকারী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে র‌্যাবের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে, দেশী/বিদেশী গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদে একজন মহিয়সী “মা” সম্পর্কে জানা যায় পাচার হওয়া মেয়েকে পাচারকারীর হাত হতে উদ্ধারে এই “মা” নিজ জীবন বিপন্ন করে, জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিতে দ্বিধাবোধ করেননি। মায়ের এই আত্মত্যাগ ও সন্তানের প্রতি ভালবাসা এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। মায়ের এই অর্জন দেশবাসীর অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা ও সাধুবাদে সিক্ত।


গত জানুয়ারি ২০২১ মাসে রাজধানীর পল্লবী এলাকায় বর্ণিত মায়ের অজ্ঞাতসরে তার ১৭ বছর বয়সী তরুণী কন্যাকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করা হয়। স্বাবলম্বী হতে চাওয়া উক্ত তরুণীকে পাচারকারীরা পার্শ্ববর্তী দেশে উচ্চ বেতনে বিউটি পার্লারে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে প্রলুব্ধ করে। ভুক্তভোগী মেয়ে সাতক্ষীরা সীমান্তে পাচারকালীন সময়ে তার মা’কে পাচারের বিষয়টি জানাতে সক্ষম হয়। অনন্যোপায় হয়ে মা একাই তার মেয়েকে উদ্ধার করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন।

এই মহিয়সী মা পাচার চক্রের সাথে যোগাযোগ করে। চক্রটি একই প্রক্রিয়ায় পার্শ্ববর্তী দেশে ভিকটিমের মা’কেও পাচার করে। পরিচয় গোপন করতে ভিকটিম মা ‘মুন্নি’ নাম ধারণ করে। পরবর্তীতে, ঐ চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে মা কৌশলে পালিয়ে গিয়ে মেয়ের সন্ধান করতে থাকে। একপর্যায়ে পার্শ্ববর্তী দেশের উত্তর দিনাজপুরের পাঞ্জিপাড়ায় একটি নিষিদ্ধ পল্লীতে তার মেয়ের সন্ধান পান। অতঃপর স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় মা তার মেয়েকে উদ্ধার করে। মেয়েকে নিয়ে দেশে ফেরার সময় সীমান্ত এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে বিএসএফের নিকট তারা আটক হয়। কিন্তু বিএসএফ সম্পূর্ণ ঘটনা শুনে সমব্যথী হয়ে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদেরকে বিজিবি’র নিকট হস্তান্তর করে।

উক্ত ঘটনা দেশী ও বিদেশী গণমাধ্যমে বহুল প্রচারিত হয় এবং ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এহেন একটি ঘটনায় আমরাও মানবিকভাবে উদ্দোলিত হই। মানবিক দায়বদ্ধতা হতে র‌্যাব সংশ্লিষ্ট ঘটনায় কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করে। ফলশ্রæতিতে র‌্যাব উক্ত ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে ও বর্ণিত মানব পাচারের বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল গত মধ্যরাত হতে অদ্য ১৬ আগস্ট, ২০২১ তারিখ সকাল পর্যন্ত রাজধানীর পল্লবী এবং মাদারীপুরের শিবচর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নারীপাচারকারী কাল্লু-সোহাগ @ কাল্লু-নাগিন সোহাগ @ মামা-ভাগিনা @ কালা-নাগিন চক্রের মূলহোতা (১) মোঃ কালু @ কাল্লু(৪০), পিতাঃ মোঃ মতিউর রহমান, পল্লবী, ঢাকা; অন্যতম সহযোগী (২) মোঃ সোহাগ @ নাগিন সোহাগ (৩২), পিতাঃ মৃত কবির হোসেন, পল্লবী, ঢাকা ও সীমান্তবর্তী এজেন্ট (৩) মোঃ বিল্লাল হোসেন(৪১)’ পিতাঃ আকিমুদ্দিন মোড়ল, দেবহাটা, সাতক্ষীরা’দেরকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকারীরা পাচার চক্রের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলে তথ্য প্রদান করেছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, এই চক্রটি বিভিন্ন প্রতারণামূলক ফাঁদে ফেলে এবং প্রলোভন দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে নারী ও তরুণীদেরকে পাচার করত। তারা পার্শ্ববর্তী দেশে বিভিন্ন মার্কেট, সুপারশপ, বিউটি পার্লারসহ বিভিন্ন চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করত। তাদের মূল টার্গেট ছিল দরিদ্র ও নি¤œমধ্যবিত্ত তরুণী। চক্রের মূল হোতা গ্রেফতারকৃত মোঃ কালু @ কাল্লু(৪০) এবং গ্রেফতারকৃত মোঃ সোহাগ @ নাগিন সোহাগ (৩৪) তার অন্যতম সহযোগী।

এছাড়াও দেশেও ২০-২৫ জন এই চক্রের সাথে জড়িত বলে জানা যায়। এছাড়া গ্রেফতারকৃত বিল্লাল সীমান্তবর্তী এলাকার সম্বনয়ক। পাচার চক্রে নারী সদস্যও রয়েছে বলে জানা যায়। মূলতঃ যৌন বৃত্তিতে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যেই ভিকটিমদের পাচার করা হত বলে গ্রেফতারকৃতরা জানায়। চক্রটি ঢাকার মিরপুর, তেজগাঁও, গাজীপুরসহ বেশকয়েকটি এলাকায় সক্রিয় রয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে আর জানা যায় যে, ভুক্তভোগীদেরকে অবৈধভাবে নৌ-পথে ও স্থলপথে সীমান্ত পারাপার করানো হত। তারা কয়েকটি ধাপে পাচরের কাজটি সম্পাদন করত। প্রথমতঃ সোহাগ @ নাগিন সোহাগ এই চক্রের অন্য সদস্যরা অল্প বয়সী তরুণীদেরকে পার্শ্ববর্তী দেশে ভাল বেতনের চাকুরীর প্রলোভন দেখাত। প্রলুব্ধ ভিকটিমদের পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত কাল্লুর কাছে বুঝিয়ে দেয়া হত।

গ্রেফতারকৃত কাল্লু নিজেই অথবা ক্ষেত্রবিশেষ গ্রেফতারকৃত সোহাগ সহ অন্যান্যদের মাধ্যমে সাতক্ষীরা সীমান্তবর্তী এলাকার গ্রেফতারকৃত বিল্লালের সেইফ হাউজে অবস্থান করাত। গ্রেফতারকৃত বিল্লাল চারটি সেইফ হাউজ পরিচালনা করে থাকে। সুবিধাজনক সময়ে লাইনম্যানের মাধ্যমে তাদেরকে ভিকটিমদের ন্যায় জলপথ দিয়ে নৌকাযোগে সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকা দিয়ে অতিক্রম করানো হত। এছাড়া স্থল পথে পাচারের ক্ষেত্রে অরক্ষিত অঞ্চল ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

গ্রেফতারকৃতরা আরও জানায়, পাচার হওয়ার পর পার্শ্ববর্তী দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় কয়েকদিন ভিকটিমদের অবস্থান করানো হয়। অতঃপর সুবিধাজনক সময়ে সড়কপথে তাদেরকে চাহিদামত বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ ও বিক্রি করা হত। বর্ণিত পন্থায় ভিকটিম মেয়েকে পাঞ্জীপাড়া যৌন পল্লীতে বিক্রি করা হয়। উল্লেখ্য ভিকটিম ‘মা’ উক্ত যৌনপল্লী হতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্যদের সহযোগীতায় তার মেয়েকে মুক্ত করে নিয়ে আসে।


জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত মোঃ কাল্লু রাজধানীর পল্লবী এলাকার চিহিৃত মানব পাচারকারী ও সিন্ডিকেটের মূল হোতা। সে ৮/১০ বছর যাবত মানব পাচারের সাথে যুক্ত। সে পার্শ্ববর্তী দেশের এজেন্টদের সাথে যোগাযোগ করে সাতক্ষীরার বিল্লালসহ সীমান্তবর্তী আর কয়েকজন জন সহযোগীর মাধ্যমে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করিয়ে নারী পাচার করে আসছিল। এ পর্যন্ত সিন্ডিকেটটি প্রায় দুই শতাধিক নারী পাচার করেছে বলে গ্রেফতাকৃতরা জানায়।

গ্রেফতারকৃত কাল্লু জানায়, জনপ্রতি ১-১.৫ লাখ টাকায় প্রত্যেক ভুক্তভোগীকে পার্শ্ববর্তী দেশের দালালের নিকট বিক্রি করত। পূর্ববর্তী সময়ে কাল্লুর সীমান্তবর্তী একজন এজেন্ট গ্রেফতার হলে বিল্লাল এই সিন্ডিকেটের সীমান্তবর্তী এলাকার মূল ভ‚মিকা পালন করতে থাকে। গ্রেফতারকৃত বিল্লাল প্রায় ৫-৭ বছর যাবত সিন্ডিকেটের সাথে যুক্ত রয়েছে। ইতপূর্বে গ্রেফতারকৃত বিল্লাল ও তার সহযোগী (স্ত্রী) রাজিয়া খাতুন ২০১৮ সালে পল্লবী থানার মানবপাচার মামলায় এক বছর কারাভোগ করেছে। এছাড়া ৪-৫ বছর পূর্বে গ্রেফতারকৃত কাল্লু ও করাভোগ করেছে।

গ্রেফতারকৃত মোঃ সোহাগ @ নাগিন সোহাগ বিগত ৫-৬ বছর যাবত নারী পাচারের সাথে যুক্ত বলে জানা যায়। সম্পর্কে গ্রেফতারকৃত কাল্লু ও নাগিন সোহাগ “মামা- ভাগ্নে”। গ্রেফতারকৃত সোহাগ তার মামা কাল্লুর মাধ্যমে এই কাজে যুক্ত হয়। তার মূল কাজ চক্রের অন্য সদস্যদের মাধ্যমে ঢাকার দরিদ্র ও অল্পবয়সী তরুণীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে গমনে প্রলুব্ধ করা। সে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত বলেও তথ্য জানা যায়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। সে ২০১৭ সালে মাদক মামলায় দুই বছর কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন এবং এ নারীপাচারকারী চক্রের সাথে জড়িত অন্যান্য পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে র‌্যাবের জোড়ালো অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১