বদরুল আমীন, ময়মনসিংহ।
ময়মনসিংহ কোতুয়ালী মডেল থানায় ওসি হিসেবে শাহ কামাল আকন্দ পিপি এম (বার) যোগদান করার পর জনগনের মোবাইল হারানো, চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল উদ্ধারের ব্যপারে একজন এ এস আইকে দায়িত্ব দেন। থানার বিভিন্ন সেবা মুলক কাজের পাশাপাশি তিনি মোবাইল উদ্ধার কাজে বেশীর ভাগ সময় দেন। গত ৪ মাসে এ এসআই আমির হামজা এ পর্যন্ত ১শ ৪৭ টি মোবাইল উদ্ধার করে প্রকৃত মালিকদের ফেরৎ দিয়েছেন।
সেপ্টেম্বর থেকে হাফ জানুয়ারী ২০২২ সাল। সময়টা মাত্র ৪ মাস। আর এই সময়ে ডাক্তার, পুলিশ কর্মকর্তা ও ছিনতাই হওয়া ১শ ৪৭ টি মোবাইল ফোন উদ্ধারের করেছেন ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানার এ এস আই আমির হামজা। ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন পুরস্কারও। অফিসার ইনচর্জ শাহ কামাল আকন্দ যোগদান করার পর এ সেবা ব্যপক ভাবে চালো হয়। উপকৃতও হচ্ছে জনগন।
আমির হামজা শুধু তার কর্মস্থলের আওতাধীন এলাকার মোবাইল উদ্ধার করেন না। বিভিন্ন স্থানে হারিয়ে যাওয়া মোবাইল উদ্ধারের জন্য তার দ্বারস্থ হন অনেকে। কাউকে হতাশ হতে হয়নি তার কাছে গিয়ে। সাধ্যমতো চেষ্টা করে নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তাদের মোবাইল উদ্ধার করে দিচ্ছেন। তিনি বর্তমানে ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানায় কর্মরত আছেন।
আমির হামজা এর আগে ডিআইজি অফিসে কর্মরক ছিলেন। পরে তার পোস্টিং হয় ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা শাখায়। কোতুয়ালী মডেল থানায় মাত্র ৪ মসের অধিক সময় ধওে কর্মরত আছেন। এ সময়ের মধ্যেই তিনি ১শ ৪৭ টি মোবাইল উদ্ধার করে অফিসার ইনচার্জ শাহ কামাল আকন্দের মাধ্যমে মালিকদের হাতে পৌছে দিয়েছেন। এছাড়াও অপরাধ দমনে প্রযুক্তির ব্যবহার করে অপরাধীদেও ধরার কাজও করছেন আমির হামজা।
অনেকের সাথে আলাপকালে জানা গেছে।
মোবাইল ফোন উদ্ধার করা আমিরের চমৎকার অভিজ্ঞতা রয়েছে। পাশাপাশি সে পুলিশের বিভিন্ন ডিউটি ও অভিযান কাজেও অংশ গ্রহন করে থাকে। মোবাইল হারানোর জিডি হলেই তার ডাক পড়ে। তিনিও একটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে উদ্ধারে নেমে পড়েন। উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত লেগে থাকেন। কর্মজীবনের প্রায় অনেকটা সময় তিনি সুনামের সাথে কাটিয়েছেন। হারানো মোবাইল উদ্ধারের ক্ষেত্রে কোনটিতে তিনি দু’দিন থেকে শুরু করে দুই মাস পর্যন্ত সময় নিয়েছেন। শুধু মোবাইল ফোন উদ্ধারই নয়। কর্মস্থলের অন্য কাজগুলোও তিনি গুরুত্বসহকারে করেন। আমির হামজা বলেন।
মোবাইল ফোন উদ্ধারের ক্ষেত্রে আমি মোবাইলের দাম বা ব্যক্তির মূল্যায়ন করি না। যত কম দামের মোবাইল হোক বা গরিব রিকশাচালক বা শ্রমিকের হোক সমান গুরুত্ব দিয়ে উদ্ধার করি। কারণ মানুষের অনেক মূল্যবান জিনিস হারিয়ে গেলে সে ততটা কষ্ট পায় না, যতটা কষ্ট পায় একটি মোবাইল ফোন হারিয়ে গেলে। কারণ মোবাইলে অনেকের অনেক স্মৃতি, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে। যা হারিয়ে গেলে তার অনেক ক্ষতি ও কষ্ট হয়।
আমির হামজা জানান, জিডি করার পর ফোন উদ্ধার করে ভুক্তভোগীকে ফোন দিয়ে যখন বলি, আপনি একটা জিডি করেছিলেন, আপনার ফোনটি উদ্ধার হয়েছে। তখন তারা অনেকে বিশ্বাসই করতে চায় না। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত দু’মাসে ১শ ৪৭ টি হারানো মোবাইল উদ্ধার করেছি। নিজ থানা ছাড়াও নানা স্থান থেকে হারানো মোবাইল খুঁজে পেতে ভুক্তভোগীরা আসেন এ থানায়। অনেকে আমাকে ফোন দেয়। ব্যস্ততার কারণে অনেকের কাজ করতে পারি না। কয়েক ঘণ্টা পরে নিজেই ফোন করে জানতে চাই সমস্যার কথা।
মোবাইল ফোন উদ্ধারের প্রতি কেন আমিরে এত মনোযোগ? কেন তিনি উদ্ধারে এত সফল। এর পেছনের রহস্যই বা কি? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বিস্তারিত। আবেগাপ্লুত হয়ে আমির জানান,অনেকে বলেন ফোনটি তার মায়ের দেয়া শেষ স্মৃতি। মা ফোনটি কিনে দিয়েছেন।মা-বাবার সঙ্গে অনেক ছবিও রয়েছে ফোনে। কিছুদিন আগে তার বাবা মারা গেছেন। বাবার শেষ স্মৃতিগুলো তিনি মোবাইলে বার বার দেখতেন। মোবাইলটি না পেলে তার বাবার সব স্মৃতি শেষ হয়ে যাবে।
এমন স্মৃতির কথা বা ডকুমেন্টের কথা বিবেচনা করেই মোবাইল উদ্ধারের বিষয়ে তার সাহায্য নেয়। তিনি বলেন, মোবাইল উদ্ধারে তার একটা দক্ষতা আছে। তবে থানায় এএসআই হিসেবে তার অন্য কাজও আছে। সেই কাজগুলো ঠিক রেখে মানুষের উপকার করতে হবে। কীভাবে এতগুলো মোবাইল উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে হয়তো প্রথমদিকে কিছু মোবাইল উদ্ধার করতে গিয়ে কিছু টেকনিক শিখে গেছে। হারানো মোবাইল স্ট্রেচ করতে পারে।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানায় ওসি শাহ কামাল আকন্দ যোগদান করার পর মোবাইল উদ্ধার হওয়া কাজ করায় জনগনের কাছে বাড়তি সেবা যুক্ত হয়েছে। প্রযুক্তির এই সেবা পেয়ে জনগন উপকৃত হচ্ছে। গত ৪ মাসের অধিক সময়ে ১শ ৪৭ টি হারিয়ে যাওয়া মোবাইল উদ্ধার নেহাত কম নয়।