আজ ২রা মে, ২০২৪, রাত ৪:০১

তিন পার্বত্য জেলায় এপিবিএন’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

রফিকুল ইসলাম।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি বলেছেন,পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার জনগণের নিরাপত্তায় রাঙ্গামাটিতে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) হেডকোয়ার্টার এবং তিন পার্বত্য জেলায় এপিবিএন গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, শান্তিচুক্তি অনুযায়ী সেনাবাহিনী যেসব ক্যাম্প ছেড়ে এসেছে সেই জায়গাগুলোতে এপিবিএন মোতায়েন করা হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজ (২৬ মে) সকালে রাঙ্গামাটি পুলিশ লাইন্সে ১৮ এপিবিএন রাঙ্গামাটি, ১৯ এপিবিএন বান্দরবান এবং ২০ এপিবিএন খাগড়াছড়ির সদর দপ্তর এবং ডিআইজি, এপিবিএন (পার্বত্য জেলাসমূহ) এর কার্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আখতার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, এমপি; ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, এমপি; খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার, এমপি।


সংরক্ষিত নারী আসন-৯ এর সংসদ সদস্য বাসন্তি চাকমা, ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মোঃ সাইফুল আবেদীন, RAB মহাপরিচালক (অতিরিক্ত আইজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আশরাফ উদ্দিন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন বিপিএম (বার), খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী, বোমাং সার্কেলের সার্কেল চিফ উ চ প্রু চৌধুরী, মং সার্কেলের সার্কেল চিফ সাচিং প্রু চৌধুরী এবং চাকমা সার্কেলের সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এপিবিএন’র অ্যাডিশনাল আইজি ড. হাসান উল হায়দার।

অনুষ্ঠানে জনপ্রতিনিধি, কারবারি, হেডম্যানসহ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশে কোন চাঁদাবাজি করতে দেব না, কোন রক্তপাত হতে দেব না। তিনি বলেন, আমরা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস দমন করে জনগণকে একটা নিরাপদ বাংলাদেশ উপহার দিতে পেরেছি; সেখানে এ তিন জেলায় কেন রক্তপাত হবে?

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ অঞ্চলের মানুষ অত্যন্ত শান্তিপ্রিয়। আপনারা সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করুন, পুলিশকে সন্ত্রাসীদের তথ্য দিন। পুলিশ আপনাদের পাশে থাকবে। সন্ত্রাসীদেরকে আমরা আইনের মুখোমুখি করবো, আইন অনুযায়ী তাদেরকে শাস্তি পেতে হবে।

তিনি বলেন, দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এ তিন জেলাও একইভাবে এগিয়ে যাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ তিন জেলার প্রতি সর্বাত্মক মনোযোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন ১৯৯৭ সালে যে শান্তিচুক্তি হয়েছিল তার আগের ঘটনা আপনাদের জানা আছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর দর্শন, আমাদের স্বাধীনতার দর্শন ছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ। এ দেশ মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবার দেশ। আমরা পাহাড়ি-বাঙালি সবাই এক।

তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশে এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। এর পেছনে রয়েছে তাঁর অসাধারণ দক্ষতা, নেতৃত্ব এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। সেজন্য সারাবিশ্বে তিনি আজ নন্দিত নেতা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং তিন পার্বত্য জেলায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং উন্নয়নের জন্য সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন।

সভাপতির বক্তব্যে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেন, শান্তিচুক্তি অনুযায়ী
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যে ২৩৮ ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে সেসব ক্যাম্পে এপিবিএন মোতায়েন করা হচ্ছে। পার্বত্য এলাকার মানুষের নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এপিবিএন কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে শান্তির সুবাতাস প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তি করা হয়। শান্তি চুক্তির মূল লক্ষ্য ছিল, এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন। প্রাণহানি, রক্তপাত, অশান্তি, খুনোখুনির পরিবর্তে এ অঞ্চলের মানুষকে বাংলাদেশের মূলধারার সাথে যুক্ত করে এগিয়ে নেয়াই মূলত শান্তি চুক্তির মূল উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের পরম সৌভাগ্য শান্তিচুক্তির রূপকার যিনি তিনি আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।


আইজিপি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে এ অঞ্চলে আমরা রক্তের হোলি খেলার অপচেষ্টা লক্ষ্য করছি। রক্তপাত করে, অশান্তি সৃষ্টি করে এ অঞ্চলের মানুষকে বিভিন্নভাবে অত্যাচারিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মাত্র গুটিকয়েক লোক সন্ত্রাসের সাথে যুক্ত। রাষ্ট্র এবং জনগণের কাছে এরা তুচ্ছ। সন্ত্রাস, অপহরণের বিরুদ্ধে একটাই কাজ আমাদের বিজয়ী হওয়া। তিনি বলেন, সবার হাত একত্রিত হলে সবকিছুই সম্ভব।

সন্ত্রাসীদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে আইজিপি বলেন, আপনাদেরকে সকল অপকর্ম ছাড়তে হবে। যদি না ছাড়েন তাহলে এলাকার জনগণ আপনাদেরকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করবে। আমরা জনগণের সাথে আছি। দেশের সকল নিরাপত্তা বাহিনী জনগণকে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, আপনারা ফিরে আসেন। পার্বত্য জেলার উন্নয়নে শামিল হন। আপনাদেরকে অপহরণ খুনোখুনি, অশান্তির দুষ্ট চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, এ এলাকায় অনেক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হয়েছে। কিন্তু মামলার সাক্ষী দিতে কেউ এগিয়ে আসেননি। তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে প্রত্যেক সাক্ষীর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এপিবিএন’র ডিআইজির কার্যালয়, ১৮ এপিবিএন রাঙ্গামাটি, ১৯ এপিবিএন বান্দরবান, এবং ২০ এপিবিএন খাগড়াছড়ির সদর দপ্তর, ১৮ এপিবিএন’র আঠার মাইল ক্যাম্প, ১৯ এপিবিএন’র রাবার বাগান ক্যাম্প এবং ২০ এপিবিএন’র পুরাতন পঙ্খিমোড়া ক্যাম্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে সরকারের যুগোপযোগী সিদ্ধান্তের ফলে ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তির আলোকে তিন পার্বত্য জেলা হতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৩৮ ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়। পার্বত্য অঞ্চল দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ার কারণে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের পাশাপাশি এ এলাকা মাদকের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পুলিশের পক্ষে এককভাবে এ এলাকার আইন শৃঙ্খলা-নিয়ন্ত্রণ করা দুরহ। সরকারের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে তিন পার্বত্য জেলায় এপিবিএন গঠনের ফলে পার্বত্য অঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলা, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ ও জনসাধারণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হবে।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১