ইয়াছিন আরাফাত।
বকেয়া বেতনের দাবীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছে চান্দিনার “ডেনিম প্রসেসিং প্লান্ট” নামের একটি পোশাক কারাখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা।
বুধবার (২৪ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে মহাসড়কের চান্দিনার বেল্বাশহর এলাকায় অবরোধ করেছে তারা। বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) এর মধ্যে বকেয়া বেতন পরিশোধ করার আশ্বাসে প্রায় পৌঁনে পাঁচ ঘন্টা পর দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে অবরোধ প্রত্যাহার করে শ্রমিকরা।
দীর্ঘ পৌঁনে পাঁচ ঘন্টার অবরোধে অচল হয়ে পড়েছে দেশের লাইফ লাইন খ্যাত ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। মহাসড়কের উভয় দিকে অন্তত ২৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। যানজটে নাকাল হয়ে পড়েছে যাত্রী, গাড়ি চালক, বিদেশগামী, রোগী ও এসএসসি পরীক্ষার্থী ও শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, চান্দিনার পশ্চিম বেল্বাশহরে অবস্থিত ‘ডেনিম প্রসেসিং প্লান্ট’ পোশাক শ্রমিক কারাখানায় প্রায় তিন মাস যাবৎ শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ করছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন বেতন ভাতা না পেয়ে অন্তত তিন হাজার ক্ষুব্ধ শ্রমিক ও কর্মচারীরা বুধবার সকাল ৯টা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনার বেল্বাশহর মিলগেইট এলাকায় অবরোধ করে। দীর্ঘ চার ঘন্টা চেষ্টা করেও অবরোধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি প্রশাসন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গিয়ে শ্রমিকদের তোপের মুখে পড়েন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আশরাফুন নাহার। অবরোধ শুরুর পর থেকে মালিক পক্ষের লোকজন মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখায় বিপাকে পড়ে প্রশাসন।
পরে ‘ডেনিম প্রসেসিং প্লান্ট’ নামের ওই পোশাক কারখানা থেকে পুলিশ জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) হাবিবুর রহমানকে মহাসড়কে ডেকে অবরোধ স্থলে আনেন। পরে তিনি মালিক পক্ষের সাথে আলোচনা করে (বৃহস্পতিবার) এর মধ্যে বকেয়া বেতন পরিশোধ করার প্রতিশ্রতি দিলে দুপুরে ১টা ৪০ মিনিটে অবরোধ তুলে নেয় শ্রমিক- কর্মচারীরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আরিফুর রহমান।
এদিকে, দীর্ঘ প্রায় পৌঁনে ৫ ঘন্টার অবরোধে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ থেকে বুড়িচং উপজেলার কাবিলা পর্যন্ত উভয় পাশে প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। অবরোধ প্রত্যাহারের পরও মহাসড়কে ধীর গতিতে চলছে যানবাহন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আরেফিন ছিদ্দিকী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফজাল হোসেন, চান্দিনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন বক্সী, চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আশরাফুন নাহার, সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার জুয়েল রানা, পৌর মেয়র শওকত হোসেন ভুঁইয়া চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আরিফুর রহমান, দেবিদ্বার থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) আরিফুর রহমানসহ প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা চেষ্টা করছেন।
শ্রমিক নূরজাহান জানান, প্রতি মাসের ১০ তারিখে আমাদের বেতন ভাতা পরিশোধ করার কথা। কিন্তু আমরা পর্যাপ্ত কাজ করে পোশাক তৈরি অব্যাহত রাখলেও গত এক বছর যাবৎ আমাদের বেতন অনিয়মিত। গত তিন মাস যাবৎ আমাদের বেতনের একটি টাকাও পরিশোধ করছে না। এমন অবস্থায় আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে।
অপর শ্রমিক মোহাম্মদ হোসেন জানান, বেতনের জন্য আমরা প্রতিবাদ করলেই মালিক পক্ষ আমাদের চিহ্নিত করে ছাঁটাই করে দেয়। তাদের (মালিক পক্ষে) সব কিছু ঠিক আছে, শুধু আমাদের বেতন দিতেই সমস্যা। আমাদের দিয়ে ওভারটাইম করায় কিন্তু সেই ওভারটাইমের টাকাও পাইনা। গার্মেন্টেসের প্রোডাক্টশন কোন মাসেই আমরা কম দেই না। কিন্তু মাস শেষে আমাদের বেতন নাই।
এদিকে, ওই গার্মেন্টেস এর একাধিক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, মূলত মালিকের কয়েকটি ব্যাংক একাউন্ট নাকি সরকার বন্ধ করে রাখছে। তাই মালিক পক্ষ শ্রমিকদের বেতন না দিয়ে শ্রমিকদের ক্ষেপিয়ে তুলে নিজের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন।
এদিকে, দীর্ঘ যানজটে পড়ে আটকতে থাকা গাড়ি চালক মিজানুর রহমান জানান, কোন কিছু হলেই মহাসড়ক অবরোধ! এটা কেমন কথা। একটি কারখানার কারণে কত হাজার হাজার যানবাহন রাস্তায় ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে আছে। তা কি কেউ দেখে না? আমি সকাল সোয়া ৯টায় বেল্বাশহর এলাকায় আটকা পড়েছি, এখন প্রায় পৌঁনে ১টা বাঁজে এখনও এক চুল নড়তে পারছি না।
কুমিল্লার চান্দিনা ও দাউদকান্দি সার্কেলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার জুয়েল রানা জানান, বেতন ভাতার দাবীতে শ্রমিকদের সাড়ে চার ঘন্টা ব্যাপী দীর্ঘ অবরোধে অচল হয়ে পড়েছে মহাসড়ক। তবে শ্রমিকদের নির্দিষ্ট কোন নেতা না থাকায় এবং মালিক পক্ষের গাফিলতিতে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এ ব্যাপারে জানতে ‘ডেনিম প্রসেসিং প্লান্ট’ গার্মেন্টের পরিচালক আলমগীর হোসেন এর ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তার ব্যবহৃত ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আরেফিন ছিদ্দিকী জানান, আমরা অনেক চেষ্টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে মহাসড়ক অবরোধ মুক্ত করেছি। গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।