নেকবর হোসেন কুমিল্লা প্রতিনিধি।
পুলিশ ও সেনাবাহিনীসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থায় চাকুরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ও সত্যিকার পুলিশ ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে চাকুরি প্রত্যাশীদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করে পরবর্তীতে ভুয়া নিয়োগপত্র প্রদান করে বিভিন্ন সময়ে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয় একটি প্রতারকচক্র। তারা কখনো মেজর কখনো পুলিশ অফিসার, আবার কখনো সরকারি দপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে দীর্ঘ বছর ধরে প্রতারণা করে।
আসছিল। অবশেষে চক্রের ৬ সদস্য র্যাবের জালে ধরা পড়েছেন। মঙ্গলবার রাতে কুমিল্লা ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয় এবং জব্দ করা হয় ভুয়া নিয়োগপত্র, পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট, কম্পিউটার, র্যাবের ইউনিফর্ম, মোবাইলের অসংখ্য সিম, পিস্তল কভারসহ প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত নানা সরঞ্জামাদি। বুধবার (৯ মার্চ) দুপুরে র্যাবের কুমিল্লা ক্যাম্প কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন ক্যাম্প কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে- বরগুনার বেতাগী উপজেলার ফুলতলা গ্রামের মৃত ইয়াছিন মোল্লার ছেলে মো গোলাম কবির ওরফে মেজর শামীম ওরফে করিম ওরফে গাফফার (৫৫)তার সহযোগী ফরিদপুরের ভাংগা থানার গংগাধরদী গ্রামের শাহাদাৎ হোসেন সাহেব আলীর ছেলে তানভীর আহমেদ রাজু (২৮), লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থানার মধ্যভাদুর গ্রামের মৃত সিদ্দিক মিয়ার ছেলে মো. হুমায়ুন কবির (৪৭), জামালপুরের শরিষাবাড়ি থানার চরহাঁটবাড়ি গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে মোখলেছুর রহমান ওরফে মুকুল (৪৭)কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে মো. রিপন মিয়া (৩২) ও একই উপজেলার মান্দারিয়া গ্রামের মৃত আনা মিয়ার ছেলে মো. হোসেন মিয়া (২৮)।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্রটি চারটি দলে বিভক্ত। এ চক্রের মূল হোতা মো. গোলাম কবির ওরফে ‘মেজর’ শামীম এ চক্রের প্রধান ‘বড় স্যার’। তিনি ১৯৮২ সালে সেনাবাহিনীতে সিভিল বাবুর্চি হিসেবে যোগদান করে ১৯৯৩ সালে চাকুরি শেষ করেন। সেনাবাহিনীর ‘মেজর’ পরিচয়ে প্রতারণার দায়ে তিনি ২০১১ সালে জেল খাটেন। জেল থেকে বের হয়ে শামীম তৈরি করেন প্রতারক সিন্ডিকেট। তিনি পত্রিকায় প্রকাশিত চাকুরির বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করেন।
এবং চক্রের রিপন হোসেন ও হুমায়ুনের মাধ্যমে কম শিক্ষিত ও সহজ-সরল বেকার লোকদের টার্গেট করে চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকায় বড় স্যার’ শামীমের কাছে নিয়ে যান। সেখানে শামীম চাকুরির ধরণ অনুযায়ী নিজেকে বড় কর্মকর্তার (বড় স্যার) মিথ্যা পরিচয়ে চাকুরি প্রত্যাশীদের ইণ্টারভিউ নেন এবং তাদের ডাক্তারি পরীক্ষা করান। পরে তাদের বায়োডাটা ও অন্যান্য নথিপত্র তৈরি করেন চক্রের মুকুল। এ চক্রের খলিল ও রাজু পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলায় চাকুরি প্রত্যাশীদের নথিপত্র প্রেরণ করেন।
পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হলে চক্রের উপর চাকুরি প্রত্যাশীদের আস্থা ও বিশ^াস জন্মে এবং চুক্তি অনুযায়ী টাকা হাতিয়ে নেয়া শুরু হয়। সংশ্লিষ্ট সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তার পরিচয়ে রাজু ও খলিল চাকুরিপ্রার্থীদের বরাবরে কথিত নিয়োগপত্র প্রেরণ করে টাকা হাতিয়ে নেয়। চাকুরিতে যোগদানের তারিখ ঘনিয়ে আসলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সাময়িক সমস্যার কথা উল্লেখ করে তারিখ পিছিয়ে মোবাইল ফোনে ক্ষদে বার্তা পাঠিয়ে মোবাইল বন্ধ করে দেয়া হয়। এ চক্রের পুলিশের এএসআই খলিল একসময় র্যাবে এবং হুমায়ুন ডিজিএফআই-এ গার্ড হিসেবে কর্মরত ছিল। এএসআই খলিল প্রতারণার দায়ে বর্তমানে মুন্সিগঞ্জ কারাগারে আছে।
র্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লা ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান ভুক্তভোগী জেলার চৌদ্দগ্রামের রফিক শাহজাহান ও জাকির হোসেনের পৃথক অভিযোগের ভিত্তিতে কুমিল্লা ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে চক্রের মূল হোতাসহ মোট ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসময় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত র্যাবের ১টি ইউনিফর্ম ও ১টি শার্ট, ১ জোড়া বুট জুতা, খলিলনামীয় ১টি ন্যাম প্লেট।
বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত চাকুরির বিজ্ঞাপন, বিভিন্ন লোকের জীবন বৃত্তান্ত, পিস্তল কাভারসহ একটি পুলিশ আইনের বই, দুইটি কম্পিউটার ও মোবাইলের অসংখ্য সিম জব্দ করা হয়। তিনি আরো জানান জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘদিন যাবত চাকুরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকার ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।