স্টাফ রিপোর্টার।
দীর্ঘদিন দিন কুমিল্লা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে কর্মরত ছিলেন উপপরিদর্শক পরিমল দাশ পিপিএম কুমিল্লায় যোগদানের পরেই শুরু করেন মাদক ও অস্ত্রের বিরুদ্ধে অভিযান। একে একে সফল অভিযানের মধ্য দিয়ে নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় তুলে ধরেন। স্বীকৃতি স্বরুপ চট্টগ্রাম রেঞ্জে একাধিকবার শ্রেষ্ঠ উপ পরিদর্শক হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন।
তার আগেই একবার পিপিএম পদক ও দু’বার আইজিপি ব্যাচ পেয়েছেন। চলতি মাসের ২৮ তারিখ কুমিল্লা থেকে বদলি হয়ে গাজীপুরে যোগদান নিয়েছেন। কুমিল্লা থেকে বদলি হয়ে চলে যাওয়ার সময় পুলিশ কর্মকর্তা পরিমল চন্দ্র দাশ পিপিএম সবার ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের আগস্টের শেষে কুমিল্লায় যোগদান করেন পরিমল দাশ পিপিএম যোগদানের পরে মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ীদের জন্য মূর্তিমান আতংকে পরিনত হয়েছেনতিনি পাশাপাশি পুলিশি সেবা নিতে আসা অসহায় মানুষদের জন্য দেবদূতের ভূমিকায় অবর্তীণ হন। কুমিল্লায় কর্মরত অবস্থায় উপপরিদর্শক পরিমল দাশ পিপিএম বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর মামলার রহস্য উদঘাটন করেছেন। পাশাপাশি মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধেও সফল অভিযান পরিচালনা করেছেন।
গত ২০১৮ সালের ২২ মার্চ ভোরে এস এ পরিবহনের একটি কার্ভাড ভ্যান ঢাকা কাকরাইল থেকে বিভিন্ন মালামাল ও পার্সেলসহ কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামের পদুয়া আইডিয়াল পাম্পের বিপরীতে যানজটে কাভার্ড ভ্যান আটকা পড়লে একদল দুস্কৃতিকারী কার্ডাভ ভ্যানের পিছনের তালা ভেঙ্গে নগদ টাকা ও বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী চুরি করে নিয়ে যায়। এ নিয়ে মামলা হয়। বেশ কয়েকজন তদন্ত কর্মকর্তা রহস্য উদঘাটন করতে পারে নি। এবার দায়িত্ব পড়ে পরিমল দাশের পিপিএম এর উপর। ঘটনায় চজড়িত পাঁচজন আসামীর সাথে চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধার করেন।
যোগদানের বছরেই একেবারেই ক্লুলেস দুটি হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেন। যার মধ্যে সদর দক্ষিণ থানার চাঞ্চল্যকর শিশু নাবিলা আক্তার (৪) হত্যার মূল আসামী মেহরাজ হোসেন তুষার (২০) এবং ব্রাক্ষণপাড়া থানার চাঞ্চল্যকর আশেয়া আক্তার (১৪) হত্যার মূল আসামী মোঃ জাবেদ (৩০)’ কে গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদে খুনের ঘটনা স্বীকার করেন।
২০১৯ শুরুতে সালে জেলার দেবিদ্বারে পাঁচ সন্তানের মুর্শিদা বেগম (৭৫) এর বিল্ডিংয়ের গ্রিল কেটে ভিতরে প্রবেশ করে, হাত, পা বেধেঁ মুখে স্কচস্টেপ দিয়ে পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে স্বর্ণলংকার, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন চুরি করে নিয়ে যায়। ক্লাুলেস এই মামলাটির দায়িত্ব নিয়ে আসামীদের ধরে আদালতে প্রেরণ করেন।
২০১৯ সালে ১৪/১৫ জনের সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাতদলকে আগ্নেয়াত্র ও দেশীয় অস্ত্রসহ ১০ জন ডাকাতকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারের আগে গোলাগুীর হয়। তবে পিছু হটেন নি পরিমল দাশ ও তার সঙ্গীয় ফোর্স। ডাকাতদের গ্রেফতারের পাশি তাদের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র দেশীয় অস্ত্রগুলো উদ্ধার করেন।
একই সময় কুমিল্লা ইবনে তাইমিয়া স্কুলের প্রথম শ্রেনীর ছাত্র প্রবাসীর পুত্র মিরান (৬) কে দুই অপহারক অপরণ করে ৮ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এ ঘটনায় শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান চালিয়ে দুই অপহরণকারীকে গ্রেফতার অপহৃত শিশু মিরাণকে উদ্ধার করে ২০১৯ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে ছুটিতে বাড়ি ফেরার পথে নৌবাহিনীর সদস্য মেহরাব হোসেন টোটেল (২০) অজ্ঞাতরা ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। এ ঘটনায় পরিমল দাশ নিজের দক্ষতার পরিচয় দেন। গ্রেফতার করেন দুই আসামীকে।
একই বছর প্রায় এক কোটি দশ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায় বিকাশকর্মী মোঃ সাইফুল। পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় দ্রুততম সময়ে আসামীকে গ্রেফতার ও টাকা উদ্ধার করেন পরিমল দাশ।
শুধু মামলার আসামী গ্রেফতারেই নয়, অস্ত্র উদ্ধারে পারদর্শী পরিমল দাশ কাজ করেন একবারেই সিনামেটিক স্টাইলে। গত ২০১৯ সালের এপ্রিলে কুমিল্লা নগরীর শাসনগাছায় অভিযান চালিয়ে স্নেহনীড় হাউজিং এলাকায় ফ্রেন্ডস টাওয়ার এর ৭ম তলা থেকে অত্যাধুনিক ২টি শটগান, ১টি বিদেশী পিস্তল, ১০ রাউন্ড গুলি এবং শটগানের ৯০ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করেন।
এছাড়াও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও পদ্ম সেতু নিয়ে গুজব ছড়ানোর অপরাধে বেশ কয়েকজনকে দ্রুত সময়ে গ্রেফতার করেন মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে গিয়ে বেশ কয়েকবার সরাসরি বন্দুকযুদ্ধ করেন। এমন একটি ঘটনা ২০১৯ সালের। কোতয়ালী মডেল থানার তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক কারবারী রাসেলসহ একাধিক মাদক কারবারীরা কোতয়ালী মডেল থানাধীন গোমতী নদীর বেড়িবাধের শ্রীপুর নামক স্থানে নেশা জাতীয় মাদক ক্রয় বিক্রয় করছে। এ,মন সংবাদে সেখানে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে হাজির পরিমল দাশ পিপিএম।
পুলিশ দেখে মাদক কারবারীরা শুরু করেন গুলাগোলি শুরু হয়। পুলিশ ও মাদক ব্যবসায়ীদের পাল্টা গোলা গুলির কালে কুখ্যাত তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী রাসেল গুলিবিদ্ধ হয় ও ডিবি পুলিশের কয়েক জন সদস্য আহত হয় এবং অন্যান্য মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে একটি পাইপগান, ২(দুই) রাউন্ড গুলি, রামদা ও ৫,৫০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট পাওয়া যায়। আহত মাদক ব্যবসায়ী রাসেলকে কুমেক হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষনা করে।
একই বছর পূর্ব শক্রুতার জের ধরে মেঘনার ভাওরখোলা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ফারুক আব্বাসী নেতৃত্বে ২০/২৫ জনের সংঘবদ্ধ দল আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশী অস্ত্রে নিয়ে নাজমা আক্তার (৫৫) কে কুপিয়ে হত্যা করে। এমন লোমহর্ষক ঘটনার পরেই নড়েচড়ে বসে আইনশৃংখলা বাহিনী। সেখানে নিজের পারমঙ্গমতায় পরিমল চন্দ্র দাস সঙ্গীয় ফোর্সসহ মামলার প্রধান অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক আব্বাসীসহ ৭ জন আসামীকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করে মেঘনা থানায় হস্তান্তর করেন।
শুধু মাদক অস্ত্র উদ্ধারই নয়- জঙ্গীদের আটকেও পরিমল চন্দ্র দাশ পিপিএম কুমিল্লায় আলোচিত কিছু অভিযান পরিচালনা করেন। সেখানেও নিজের দক্ষতার ছাপ ফুটিয়ে তুলেন গত বছর কুমিল্লার ব্রাহ্মনপাড়া থানাধীন বাগড়া দৌলতপুর গনি মিয়ার বাড়ী হতে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংঘটন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর একটি সেল ‘দারুল জান্নাত’ এর সক্রিয় ৩ জঙ্গি সদস্যকে অত্যন্ত সাহকিতার সাথে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। জঙ্গি গ্রেফতারের ফলে বড় ধরনের নাশকতার হাত থেকে দেশবাসী রক্ষা পায়।
এছাড়াও গত বছরের শেষের দিকে দাউদকান্দি থানাধীন দাউদকান্দি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারের কম্পাউন্ডে দুই ছেলে মেয়ে হিন্দি গানের ভিডিও ধারন করে লাইকিতে আপলোড করে। মসজিদ কম্পাউন্ডে লাইকির ভিডিও প্রচার হওয়ার পর ধর্মপ্রান মুসুল্লিদের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করায় তারা প্রতিবাদ শুরু করে। বিষয়টি পুলিশ সুপারের নির্দেশে
ডিবির এসআই পরিমল চন্দ্র দাস পিপিএম সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সসহ লাইকির ভিডিও ধারনকারী মোঃ ইয়াছিনকে গ্রেফতার পূর্বক দাউদকান্দি থানায় সোপর্দ করেন। এতে করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
তবে গত বছর কুমিল্লায় বেশ কয়েকটি আলোচিত ঘটনায় পরিমল চন্দ্র দাশের কর্মতৎপরতা কুমিল্লাবাসীকে স্বস্তি দিয়েছে। বছরের শেষের দিকে কুমিল্লা নানুয়ার দিঘীর পাড়ে আলোচিত পূজামন্ডপে পবিত্র কোরান অবমাননা এবং এর জের ধরে সহিংসতার ঘটনায় জড়িত আসামীদের গ্রেফতার ও আদালতে প্রেরণে নিরলস কাজ করেন। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওই চৌকশ কর্মকর্তা দিন রাত সমানে অভিযান পরিচালনা করেন।
পূজামন্ডপের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে কুমিল্লা নগরীর ১৭ নং ওয়ার্ডের পাথুরিয়াপাড়ায় কাউন্সিলর সৈয়দ মোঃ সোহেলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় স্তম্বিত হয়ে পড়ে গোটা কুমিল্লা। জনমনে ভয় সৃষ্টি হয়।
এ ঘটনায় অভিযানে নামেন পরিমল দাশ পিপিএম বরাবরের মত মাত্র কয়েক দিনের মধ্য কাউন্সিলর সোহেল হত্যার আসামীদের গ্রেফতার করতে অভিযান পরিচালনা করেন। গভীর রাতে গোমতীনদীর পাড়ে পেয়ে যান ওই দূবৃর্ত্তদের। মুখোমুখি গোলাগুলির ঘটনায় তিন অস্ত্রধারী আসামী নিহত হয়। এ ঘটনায় অন্যান্য আসামীদেরও গ্রেফতার করেন এদিকে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার সূর্বণপুরে ডাক্তার দম্পত্তিকে হত্যার ঘটনায় দ্রুত আসামীদের গ্রেফতার চার্জশিট দিতে সক্ষম হন পরিমল দাশ।
এছাড়াও গত বছর চালককে অচেতন করে পাহাড় থেকে ফেলা দিয়ে প্রাইভেটকার নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় মামলার একদিনের মধ্যেই মূল আসামেিদর আটক করে আদালতে প্রেরণ করেন এমন সব সফল অভিযানের কারনে কুমিল্লায় এই চার বছরে কর্মজীবনে পরিমল দাশ পিপিএম মন জয় করেছেন সব জেলাবাসীর। পরিমল চন্দ্র দাশের কুমিল্লায় কর্ম জীবন নিয়ে দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা পরিমল দাশ ভালো সেবা দিয়েছেন। তাকে জেলাবাসী অনেক দিন মনে রাখবে।
কুমিল্লা থেকে গাজীপুর চলে যাওয়ার আগে নিজের অনুভূতিব্যক্ত করে গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক পরিমল চন্দ্র দাশ বলেন, আমি আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালণ করেছি মাত্র। ভালো মন্দ মূল্যায়ন করতে পারবে কুমিল্লাবাসী। আমি আগেও মাদক-মাদক ব্যবসায়ী, অবৈধ অস্ত্র এবং অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো।
আমি কুমিল্লার মানুষের সহযোগিতার কথা মনে রাখবো। এই জেলা শিক্ষা সংস্কৃতিতে অনেক প্রাগসরমান। কুমিল্লায় আমার অনেক বন্ধু আছে। অনেক শুভাকাংখি রয়েছে। পাশাপাশি আমার সহকর্মীরা রয়েছেন। আমার শ্রদ্ধেয় পুলিশ সুপার স্যার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্যারসহ আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করচি। এই চার বছরে দায়িত্ব পালনে সবার আকুন্ঠ সমর্থণ পেয়েছি। সবার সহযোগিতা আমার মনে থাকবে। এমন ভালোবাসা পেয়েছি যে ভালোবাসা আমাকে সামনে এগিয়ে চলার প্রেরণা জোগাবে।