আজ ১৫ই অক্টোবর, ২০২৪, সকাল ৭:১৭

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আবদুল্লাহ আল মামুন:

সুমিষ্ট খেজুরের রস পছন্দ করে না এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম। কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকালে মিষ্টি রোদে মধুবৃক্ষ থেকে আহরণ এক গ্লাস সুমিষ্ট খেজুরের রস মানুষকে সতেজ করে তোলে। আবার এই রস জ্বাল দিয়ে খেতে দারুণ সুস্বাদু এই ছবি বলে দেয় এটি একটি শীতের সকাল। খুব ভোরে গাছ থেকে রস পেরে গাছিরা। এটিই বাঙালীর ঐতিহ্য।

শীতকালে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে মায়ের হাতে বানানো হরেক রকমের পিঠা-পুলি খাওয়ার ধুম পরে যায়। আর পিঠা তৈরির অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে খেজুরের রস। সেজন্য তীব্র শীতের মাঝেও রস সংগ্রহের জন্য ব্যস্ত থাকেন গাছিরা। কিন্তু কয়েক বছরের ব্যবধানে ক্রমবর্ধমান মানুষের বাড়ি-ঘর নির্মাণ আর নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে ক্রমেই খেজুরগাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে দাগনভূঞা উপজেলায়। যার ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় মানুষের ঘর-বাড়ি নির্মাণ আর নির্বিচারে গাছ কাটার সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। যার ফলে খেজুরের গাছের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেকটাই কমে যাচ্ছে। পূর্বেও শীতকালে এসব এলাকার গাছিরা খেজুরগাছের রস সংগ্রহে খুবই ব্যস্ত সময় কাটাতেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে তা ক্রমশ বিলুপ্ত হতে বসেছে। খেজুর রস দিয়ে শীত মৌসুমে পিঠা ও পায়েস তৈরির প্রচলন থাকলেও শীতকালীন খেজুরগাছের রস এখন পাওয়া দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে।

ছবিতে দাগনভূঞা উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ আলীপুর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী কুরবার দিঘির পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন গাছি মোঃ জাহাঙ্গীর আলম।

স্থানীয় ও খেজুর গাছি সূত্রে জানা যায়, দাগনভূঞা উপজেলায় কিছু কিছু এলাকায় এখনো পর্যাপ্ত পরিমান খেজুরগাছ থাকলেও সঠিকভাবে তা পরিচর্যা করা হচ্চে না। নতুন করে গাছের চারাও রোপণ করা হচ্ছে না। অন্যদিকে, গাছ কাটার পদ্ধতিগত ভুলের কারণে প্রতি বছর অসংখ্য খেজুর গাছ মারা যাচ্ছে। এছাড়া, জ্বালানি হিসেবে খেজুর গাছ ব্যবহার করার কারণেও ক্রমেই কমে যাচ্ছে খেজুরগাছের সংখ্যা।

প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও শীত পড়ার শুরুতেই উপজেলার সর্বত্র পেশাদার খেজুর গাছির চরম সংকট পড়ে। তার পরেও কয়েকটি এলাকায় শখের বশত গাছিরা নামেমাত্র খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজ করছেন। ইতোমধ্যে ওই সব গাছিরা সকাল-বিকেল দুই বেলা রস সংগ্রহ করছেন। প্রভাতের শিশির ভেজা ঘাস আর ঘণ কুয়াশার চাঁদর, হেমন্তের শেষে শীতের আগমনের বার্তা জানিয়ে দিচ্ছে আমাদের।


এক সময় মৌসুমী খেজুর রস দিয়েই গ্রামীণ জনপদে শুরু হতো শীতের আমেজ। শীত যত বাড়তে থাকতো খেঁজুর রসের মিষ্টতাও তত বাড়তো। শীতের সাথে রয়েছে খেঁজুর রসের এক অপূর্ব যোগাযোগ। গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষ থেকে সু-মধুর রস বের করে গ্রামের ঘরে ঘরে পুরোদমে শুরু হতো পিঠা, পায়েস ও গুড় পাটালী তৈরির ধুম। গ্রামে গ্রামে খেজুরের রস দিয়ে তৈরি করা নলের গুড়, ঝোলা গুড়, দানা গুড় ও বাটালী গুড়ের মিষ্টি গন্ধেই যেন অর্ধভোজন হয়ে যেত। খেজুর রসের পায়েস, রসে ভেজা পিঠাসহ বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারের তো জুড়িই ছিল না। কিন্তু কালের বির্ততনে প্রকৃতি থেকে আজ খেজুরের রস একেবারেই হারিয়ে যেতে বসেছে।

সূত্রমতে, অনেকে শখের বশে খেজুরগাছকে মধুবৃক্ষ বলে থাকতেন। ওই সময় শীতের মৌসুমে খেজুর রসের নলেন গুড়ের মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠতো গ্রামীণ জনপদ। খেজুর রস দিয়ে গৃহবধূদের সুস্বাদু পায়েস, বিভিন্ন ধরনের রসে ভেজানো পিঠা তৈরির ধুম পড়তো। রসনা তৃপ্তিতে খেজুরের নলেন গুড়ের পাটালির কোনো জুড়ি ছিল না। গ্রামীণ জনপদের সাধারণ মানুষ শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠে কাঁপতে কাঁপতে ঠান্ডা খেজুর রস না খেলে যেন দিনটাই মাটি হয়ে যেত।

গাছি মোঃ জাহাঙ্গীর আলম সহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, বর্তমানে যে হারে খেজুরগাছ হারিয়ে যেতে বসেছে, হয়তো এক সময় আমাদের এলাকা থেকে খেজুরগাছ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইলে আমাদের সবার উচিত তালগাছের মতো বেশি করে খেজুরগাছ লাগানো এবং তা যত্ন সহকারে বড় করা। যদি আমরা আমাদের এই হাজার বছরের ঐতিহ্যকে আগামী প্রজন্মের জন্য ধরে রাখতে চাই তাহলে এই কাজে আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১