শাহ মোহাম্মদ রনি।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় যোগদান করলেন বিচক্ষণ ওসি মোঃ শাহ্ কামাল আকন্দ
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে যোগদান করেছেন মোঃ শাহ্ কামাল আকন্দ পিপিএম (বার) বৃহস্পতিবার বিকালে তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। এর আগে টানা ৩ বছর জেলা গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) কর্মরত ছিলেন। কর্মদক্ষতা, অপরাধ দমন এবং মানবিকতার কারণে তিনি ব্যাপক আলোচিত। অপরাধীদের কাছে আতঙ্ক হলেও অসহায়দের কাছে ভিন্ন এক মানুষ।
বিচক্ষণতা যার মধ্যে অবিচল। ৩ বছরে উদঘাটন করেছেন ৪৪টি ক্লুলেস হত্যা মামলা। গ্রেফতার করা হয় মামলাগুলোর আসামিদের। অধিকাংশরাই আদালতে কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। একই সময় ডিবির অন্যান্য অফিসার এবং কনস্টেবলদের সহযোগিতায় প্রায় ৬১ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। বিভিন্ন মামলা এবং অপরাধ কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় ৩ হাজার অভিযুক্তকেদেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াও উদ্ধার করা হয়।
ডাকাতি ও চুরি যাওয়া মূল্যবান মালামাল। রেঞ্জ ডিআইজি এবং এসপির নির্দেশে ওসি শাহ্ কামাল আকন্দের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের চৌকস সদস্যদের তৎপরতার কারণে নগরী এবং আশপাশের অপরাধ অনেকটাই কমে গেছে। ধারাবাহিকতা টিকিয়ে রাখতেই মূলত তাকে কোতোয়ালি মডেল থানার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। নতুন কর্মস্থলে বদলির আদেশ প্রদান করায় রেঞ্জ ডিআইজি ব্যারিস্টার মোঃ হারুন অর রশিদ, এ্যাডিশনাল ডিআইজি মোঃ শাহ আবিদ হোসেন এবং এসপি মোহাঃ আহমার উজ্জামানসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
মোঃ শাহ্ কামাল আকন্দ। সাহসিকতার কারণে ২০১৫ এবং ২০১৮ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল-এ (পিপিএম) ভূষিত হন। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সানন্দবাড়ি আকন্দপাড়ায় বাড়ি মোঃ শাহ্ কামাল আকন্দ আশেক মাহমুদ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বিএ পাস করে ০১-০৬-১৯৯৬ তারিখে এসআই পদে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। সিলেট, চট্টগ্রাম এবং ময়মনসিংহ রেঞ্জে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ময়মনসিংহ ডিবিতে যোগদানের আগে তিনি কুমিল্লা ডিবিতে কর্মরত ছিলেন। সেখানেও ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, বিপুল পরিমাণের মাদকদ্রব্য উদ্ধার এবং দাগী অপরাধীদের গ্রেফতার করে ব্যাপক আলোচিত হয়েছিলেন।
জানা যায়, উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, বিপুল পরিমাণের মাদকদ্রব্য উদ্ধার এবং অপরাধীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি গত দেড় বছর মানবিকতায় সাড়া ফেলে দিয়েছেন ওসি মোঃ শাহ্ কামাল আকন্দ। ময়মনসিংহ মহানগর এবং জেলার অনেকেই তাকে চিনেন মানবিক ওসি হিসেবে। সেবা নিতে আসা বিপদগ্রস্ত মানুষের কথা শুনে অনেক বিষয়েই সমাধান দেওয়ার ক্ষেত্রেও সুনাম অর্জন করেছেন শাহ্ কামাল। মধ্য রাত পর্যন্ত নিরলস শ্রম দিয়ে নগরবাসীর হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।
এদিকে করোনার ভয়ালথাবায় দেশ যখন টালমাটাল তখনই মানবিকতার টানে মানুষের জন্য এগিয়ে আসে জেলা পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে কাজ করছে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত ও জনসচেতনা বাড়ানোর জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালানো হচ্ছে ময়মনসিংহ নগরী ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলায়। শুরু থেকেই করোনা মোকাবিলায় পুলিশ সুপার মোহাঃ আহমার উজ্জামান-এর নেতৃত্বে জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা নাগরিকদের মাস্ক এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী উপহার দিচ্ছেন।
অসহায় মানুষের মধ্যে খাদ্যপণ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে জেলা পুলিশ। এর পরই সুনাম ছড়িয়ে পড়ে পুলিশের প্রতিটি ইউনিটে। মানবিকতার টানে মানুষের সেবায় এগিয়ে আসা অন্যান্য জেলা পুলিশের মধ্যে ময়মনসিংহ এখন পর্যন্ত শীর্ষে। ‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার পুলিশ হবে জনতার’ এবং ‘পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ’ এই ২ স্লোগানকে বাস্তব রূপ দিয়েছে ময়মনসিংহ পুলিশ। লকডাউনে নগরীর পথচারী ও কষ্টে থাকা দুঃস্থ মানুষের জন্য পুলিশের ৫ টাকার ইফতার ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিলো। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের পক্ষ থেকে ইফতার বিতরণ করা হয়। খাদ্যপণ্য বিতরণ করা হয় বিপুল সংখ্যক অসহায়দের মধ্যে। পুলিশ সুপার মোহাঃ আহমার উজ্জামানের নির্দেশনা অনুযায়ী গত দেড় বছর নগরীতে জেলা পুলিশের মানবিক কার্যক্রমের অনেকটাই দেখভাল করেন ওসি মোঃ শাহ্ কামাল আকন্দ।
সূত্র জানায়, করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নগরী ও বিভিন্ন উপজেলায় ১০ হাজার অসহায় মানুষের মধ্যে খাদ্যপণ্য বিতরণ করা হয়। ৩ হাজার বক্স রান্না করা সুস্বাদু খাবার বিতরণ করা হয় নগরীর ভাসমান, অসহায় ও রিকশা চালকদের মধ্যে। প্রতীকি মূল্য ৫ টাকায় ৮ হাজার ইফতার বক্স বিতরণ করে জেলা পুলিশ। পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় নগরীতে ডিবির ওসি মোঃ শাহ্ কামাল আকন্দ এবং বিভিন্ন উপজেলায় অফিসার ইনচার্জরা (ওসি) খাদ্যপণ্য বিতরণ করেন।
জনসচেতনার পাশাপাশি আপদকালীন সময় পর্যন্ত মানবিক কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। সূত্র মতে, করোনা পরিস্থিতিতে ময়মনসিংহ নগরীতে খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি সমস্যায় পড়েন। সঞ্চিত অর্থ শেষ হওয়ার পর অসহায় হয়ে পড়েন নগরীর বিপুল সংখ্যক পরিবার। হাহাকার সৃষ্টি হওয়ার আগেই মানবিক পুলিশ সুপার মোহাঃ আহমার উজ্জামান অসহায়দের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। তালিকা তৈরী করা হয় খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষের। ২০২০ সালের ৩১ মার্চ থেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে অসহায়দের মধ্যে খাদ্যপণ্য বিতরণ শুরু করে।
জেলা পুলিশ। খাদ্যপণ্য পাওয়া অধিকাংশরাই নিম্ন আয়, হতদরিদ্র, কর্মহীন, অক্ষম, ভাসমান এবং অসহায় মানুষ। নগরীর একটি প্রতিষ্ঠানের অর্ধশত এতিমদের আশ্রয়স্থল খুঁজে বের করে তাদেরকে খাদ্যপণ্য দিয়ে ব্যাপক আলোচিত হন পুলিশ সুপার। তিনি নিজ হাতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার উল্লেখযোগ্য পরিমাণের অসহায় মানুষের মধ্যে খাদ্যপণ্য বিতরণ করেন। জেলা পুলিশের ফেসবুক পেজ, পুলিশ সুপার এবং ওসি ডিবির ফেসবুক মেসেঞ্জারে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে না খেয়ে থাকার কথা জানান অনেকেই। পরে ডিবির বিভিন্ন টিম অসহায় পরিবারের কাছে খাদ্যপণ্য পৌঁছে দেয়। নগরীতে দিনভর ডিবির মোটরসাইকেল টহল ছিলো চোখে পড়ার মতো। নিশ্চিত করা হয় বিপনী বিতান, বাণিজ্যিক, অফিস-আদালত এবং আবাসিক এলাকার নিরাপত্তা। করোনাকে পুঁজি করে কেউ যেন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে সেদিকেও নজর রাখে জেলা পুলিশ। বাড়ানো হয়েছিলো সিসি টিভি মনিটরিং।
(সূত্র জাগ্রত বাংলা )