নিষিদ্ধ বিদেশি মাদক রাখা-সহ একাধিক মামলায় আপাতত কারাবন্দি বাংলাদেশের (Bangladesh) মডেল-নায়িকা পরীমণি (Pori Moni)। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অধীনে বনানী থাকার কারাগারে রয়েছেন তিনি।
গত ১৩ জুন ঢাকা বোট ক্লাবে গিয়ে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ করেন চলচ্চিত্র নায়িকা পরীমণি। এর পরদিনই উত্তরার একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদকে। পরে এই ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ পরীমণিকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তখন থেকেই গোলাম সাকলায়েন শিথিলের সঙ্গে পরিচয় হয় পরীমণির। এরপর থেকেই শুরু হয় যোগাযোগ।
তদন্ত করতে গিয়ে চলচ্চিত্র নায়িকা পরীমণির সঙ্গে পরিচয়। সেই সূত্র ধরে গড়ে উঠেছিল প্রেমের সম্পর্ক। এরপর নিয়মিত পরীমণির বাসায় যাতায়াত শুরু করেন সেই পুলিশ কর্মকর্তা। মাঝে মাঝে গাড়ি নিয়ে বের হতেন দু’জনে। বিবাহিত সেই পুলিশ কর্মকর্তা নিজেকে পরিচয় দিয়েছিলেন অবিবাহিত হিসেবে। সর্বশেষ পরীমণি সেই পুলিশ কর্মকর্তার বাসায় এসে অবস্থান করেন প্রায় ১৮ ঘণ্টা। পরীমণি গ্রেফতারের পর অকপটে স্বীকার করেছেন সবকিছু। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় চলছে পুলিশে। আলোচিত এই কর্মকর্তার নাম গোলাম সাকলায়েন শিথিল। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হিসেবে কর্মরত তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জিজ্ঞাসাবাদে পরীমণি জানিয়েছেন, নিয়মিত কথা বলতে বলতে গোলাম সাকলায়েন শিথিলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় তার। এরপর তারা নিয়মিত গাড়ি নিয়ে ঘুরতে যেতেন। এমনকি সাকলায়েন তার বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন। সর্বশেষ গত ১ আগস্ট তার সরকারি বাসভবন রাজারবাগের মধুমতির ফ্ল্যাটে যান পরীমণি।
গত মাসে ঢাকার (Dhaka) অদূরে তুরাগতীরে বহুল আলোচিত বোট ক্লাব মামলার তদন্তের নেতৃত্বে ছিলেন পুলিশ আধিকারিক সাকলায়েন। ব্যবসায়ী নাসিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থা মামলার তদন্ত চলাকালীন নায়িকা পরীমণির সঙ্গে তাঁর সখ্য তৈরি হয়। দেশের এলিট ফোর্স র্যাবের হাতে পরীমণি গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দা পুলিশের ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি চাউর হয়ে যায়। এরই মধ্যে পরীমণি-সাকলায়েনকে নিয়ে একটি সিসিটিভি ফুটেজ (CCTV footage) ফাঁস হয়েছে। তাঁদের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাজাবাগ পুলিশ অফিসার্স কলোনির মধুমতি ভবনের গেটের সামনে ১ আগস্ট সকাল ৮ টা ১৫ মিনিটে একটি সাদা গাড়ি এসে থামে। গাড়ি থেকে নামেন লাল টি-শার্ট পরিহিত এক ব্যক্তি। এরপর কোলে একটি কুকুর-সহ সাদা রংয়ের জামা পরে গাড়ি থেকে নামেন নায়িকা পরীমণি। রিসেপশনে থাকা সদস্যদের কাছ থেকে চাবি নিয়ে দু’জন লিফটে প্রবেশ করেন। পরে গাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয় একটি ট্রলি ব্যাগ। প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর রাত দেড়টার দিকে ওই ভবনের সামনে আবার পরীমণির গাড়ি হাজির হয়। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে যাওয়ার সময় পরীমণির পরনে ছিল কালো রংয়ের পোশাক।
”সকালে গিয়ে আমি তাঁকে দিয়ে চলে এসেছিলাম, আবার রাতে গিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি।” এমটিই জানিয়েছেন পরীমণির সহযোগী দীপু, পরীমণির বনানীর বাসায় যখন পুলিশ অফিসার সাকলায়েন যেতেন, তখন তিনি সিভিল ড্রেস (প্যান্ট-শার্ট) পরা থাকতেন। এছাড়া ঢাকার বিনোদন স্পট হাতিরঝিল এলাকায় একই গাড়িতে দু’জন সময় কাটিয়েছেন, ঘোরাঘুরি করেছেন।
পরীমণির সহযোগী দীপু জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, গত কোরবানির ঈদের পর তিনি পরীমণির বাসায় গিয়ে জানতে পারেন গোলাম সাকলায়েন এসে তার বাসায় তিন দিন ছিলেন। তিনি গোলাম সাকলায়েনের সঙ্গে পরীমণির প্রেমের সম্পর্কের কথা জানতেন। পরীমণিই তাকে এই বিষয়টি জানিয়েছেন। তবে গোলাম সাকলায়েন নিজেকে অবিবাহিত বলে দাবি করেন। কিন্তু পরে সাকলায়েন বিবাহিত জানতে পারলে পরীমণি ক্ষুব্ধ হন। এ সময় সাকলায়েন তার ডিভোর্স হয়ে গেছে বলে দাবি করেন, এমন তথ্য জানান দীপু।
এক প্রশ্নের জবাবে পরীমণির গাড়িচালক নাজির হোসেন বলেন, ‘ওই লোকের (পুলিশ কর্মকর্তা সাকলায়েন) সঙ্গে পরীমণি দুই দিন রাতের বেলা হাতিরঝিলে ঘুরতে গিয়েছিলেন। হাতিরঝিলে গাড়িতে বসেই তারা মদ খেয়েছে।’
এসব অভিযোগ সম্পর্কে যোগাযোগ করা হলে গোলাম সাকলায়েন শিথিল বলেন, পরীমণির সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে। তবে তা প্রেমের সম্পর্ক নয় এবং তারা বিয়েও করেননি। পরীমণি তার বাসায় যাওয়ার কথাও তিনি অস্বীকার করেন। পরে তার বাসায় যাওয়ার সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে জানালে এ বিষয়ে তিনি আর কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
উল্লেখ্য, সাকলায়েন বিবাহিত এবং তার স্ত্রী প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা। ঢাকার পার্শ্ববর্তী একটি জেলায় তার স্ত্রী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তাদের একটি সন্তানও রয়েছে।
ঘটনা জানাজানির পর প্রাথমিক তদন্তে সাকলায়েনের সঙ্গে পরীমণির সরকারি ফ্ল্যাটে প্রবেশ এবং দীর্ঘ সময় থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। আর তারপরই ঢাকা মহানগর পুলিশের (DMP) গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. গোলাম সাকলায়েনকে বদলি করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে এডিসি সাকলায়েনকে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের এক আদেশে ডিবি থেকে ডিএমপির পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (দাঙ্গা দমন বিভাগ, পশ্চিম) বদলি করা হয়।
[সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন]