স্টাফ রিপোর্টার।
বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থি সুরাইয়া নাসরিন ( ছদ্মনাম)। মাস ছ’য়েক আগে কেউ একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার নামে একটি ফেক আইডি খোলে। পরে সেই আইডি থেকে মেসেজ পাঠিয়ে প্রেম নিবেদন করে। এরপর প্রেমে সাড়া না পেয়ে ওই নারীর কাছে টাকা চাওয়া শুরু হয়। টাকা না পেলে তার ছবি এডিট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। এক পর্যায়ে এডিট করা অশ্লীল ছবিও পোস্ট করে তার সম্মান হানি করা হয়। তখন তিনি এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে থানায় সাধারন ডায়েরি (জিডি) করেন। পরে বিষয়টি সাইবার ইউনিট বগুড়ার তদন্তকারি কর্মকর্তারা তদন্ত করে ফেক আইডি বন্ধ করতে সক্ষম হয়। শুধু এই নারীই নন, বগুড়ায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারি বহু নারী সাইবার বুলিং বা অনলাইন হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। হয়রানীর শিকার অধিকাংশই স্কুল-কলেজৈর শিক্ষার্থি। যাদের বয়স ১৬ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে।এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য গৃহবধূরাও সাইবার হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। তবে সাইবার ইউনিট বগুড়া সদস্যরা অনেক নারীকে হয়রানী থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে।
জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)’র ওসি এবং বগুড়া সাইবার ইউনিটের বর্তমান প্রধান মো: আব্দুর রাজ্জাক জানান, বগুড়ায় পুলিশের সাইবার ইউনিট প্রতিষ্ঠার পর গত তিন বছরে তিনশ’টি অভিযোগ দায়ের করা হয়। এর মধ্যে সাইবার অপরাধের অভিযোগে ৩৫ টি মামলা মামলা দায়ের করা হয়। সেইসাথে ৭০ জন সাইবার অপরাধীকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে এবং ২৪০টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৬০ টি অভিযোগের তদন্ত চলছে।
পুলিশ সুপার মো: আলী আশরাফ ভূঞা- বিপিএম-বার জানান, সাইবার পুলিশ ইউনিটে যে সব বিষয় নিয়ে মামলা হয়েছে,তার মধ্যে রয়েছে সরকারি ওয়েবসাইট হ্যাক, ক্রিপ্টোকারেন্সি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনা ও মন্ত্রীসভার নামে অপপ্রচার, পদ্মা সেতু নিয়ে গুজব ও রাষ্ট্র বিরোধী প্রচারণা, প্রতারণামূলক অর্থ হাতিয়ে নেয়া কলেজ ছাত্রীর ফেসবুক আইডি হ্যাক করে ইউটিউবে ছবি ও ভিডিও প্রকাশ, পুলিশ বাহিনীকে গালিগালাজ করে ফেসবুকে লাইভ, সেনাবাহিনীর নামে ফেসবুক আইডি খুলে ব্যবহার, ব্যাংক লোন দেয়ার নামে প্রতারণা, মহানবী (স.) কে নিয়ে কটূক্তি উেেল্লখযোগ্য। পুলিশ সুপার আরও বলেন, ফেসবুকে গুজব রটানো, রাষ্ট্র বিরোধী প্রচার জঙ্গি তৎপরতাসহ সাইবার অপরাধ দমনে কাজ শুরু করে সাইবার পুলিশ ইউনিট। একের পর এক সাইবার অপরাধী গ্রেফতার হতে থাকায় জনগণের আস্থা অর্জন করে সাইবার পুলিশ বগুড়া ইউনিট। বিশেষ করে ফেসবুক বা বিভিন্ন অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতারণার শিকার নারীরা তাদের অভিযোগ নিয়ে আসতে শুরু করে সাইবার পুলিশের কাছে। তাদের পরিচয় গোপন রেখে এবং অনেকের পরিবারকে না জানিয়ে সমস্যা সমাধান করেন সাইবার পুলিশ। ফলে অনেকের সংসার রক্ষা হওয়ার পাশাপাশি রক্ষা হয় সামাজিক মান মর্যাদা। এতে সাইবার ইউনিট বগুড়ার ওপর আস্থা বেড়েছে ভুক্তভোগিদের।
এ দিকে, সাইবার অপরাধ নিয়ে যে সব পুলিশ কর্মকর্তরা তদন্ত করেন তারা বলেন, প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে সাইবার হয়রানীও সমানুপাতিক হারে বেড়েই চলেছে। তবে বেশিরভাগ নারীই জানেন না তা থেকে সুরক্ষার পথ কী, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ভিকটিম অভিযোগ করতে যান। তদন্তকারি কর্মকর্তারা আরও বলেন,অভিযোগকারিকে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হয়। অনেকের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করেও হুমকি দেয়া হয়। তখন কিন্তু পর্যাপ্ত তথ্য পুলিশকে দিতে হবে। কারন এ গুলো ইচ্ছা করলেই বন্ধ করা যায়না। একটা নিয়মের মধ্যে এসে পুলিশ ব্যবস্থা নেয়।
উল্লেখ্য, বগুড়ার পুলিশ সুপার মো: আলী আশরাফ ভূঞার উদ্যোগে গত ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বগুড়ায় পরীক্ষামূলক ভাবে সাইবার পুলিশের কার্যক্রম শুরু করা হয়। এরপর ২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারি পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের তৎকালীন ডিআইজি এম খুরশীদ হোসেন বগুড়া পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ‘সাইবার পুলিশ বগুড়া’ ইউনিটের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
(সূত্র দৈনিক করতোয়া।)