নেকবর হোসেন কুমিল্লা প্রতিনিধি।
কুমিল্লা বিজয়পুর গ্যাস সংকটের কারনে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে রুদ্রপাল মৃৎশিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেড এর। কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটিতে ইতোমধ্যে থেমে গেছে সিরামিকের পণ্য উৎপাদন, বিদেশে পণ্য রফতানি ও ছাঁটাই করা হয়েছে শ্রমিক।
গ্যাস সংকটের সমাধান না হলে বর্তমানে কর্মরত শ্রমিকদেও ও চাকরি হারানোর আশংকা রয়েছে বলে জানান তারা। সমিতির সভাপতি তাপস কুমার পাল জানান, বিভিন্ন মহলে সমস্যার কথা জানানোর পরও কোন ধরনের সাহায্য পাচ্ছেন না তারা, উল্টো গ্যাস বিলের টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে তাদের।
এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকরা জানান, ২০১৭ সাল থেকে বন্ধ হয়ে গেছে গ্যাসের সরবরাহ। শ্রমিকদের বেতন দিতে না পারায় অনেককে চাকরি হারাতে হচ্ছে। এছাড়াও শ্রমিকদের বেতন ও সুযোগ সুবিধা ও বাড়াতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। দিন দিন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়াতে হিমসিম খেতে হচ্ছে পরিবার চালাতে। চিরেই সরকার এই সমস্যার সমাধান করবে এমনটাই প্রত্যাশা তাদের। অন্যদিকে সনাতন পদ্ধতিতে কাঠ-খড় দিয়ে পণ্য পোড়ানোর ফলে অধিক শ্রম ও সময় ব্যায় হচ্ছে তাদের।
ীী
তাপস কুমার পাল জানান, ২০১৭ সালের নভেম্বর মাস থেকে গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে। সনাতন পদ্ধতিতে পণ্য পোড়ানোর ফলে পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হচ্ছে। তবে আরও দুঃখের বিষয় হচ্ছে গ্যাস ব্যাবহার না করেও ১৪ লাখ টাকা গ্যাস বিল দিতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। সরকার এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
কুমিল্লা জেলার মৃতশিল্পে তৈরী পণ্য অনেক দেশেই রফতানি হয়। সমবায় এর জনক আখতার হামিদ খানের হাত ধরে ১৯৬১ সালে কুমিল্লা সদর দক্ষিন উপজেলার মধ্যম বিজয়পুর এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় বিজয়পুর রুদ্রপাল মৃতশিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেড। ১৯৬২ সালে সমবায় বিভাগ কতৃক নিবন্ধিত হয়।
১৯৭১ সালে পাক বাহিনির লাগানো আগুনে সম্পূর্ন ধ্বংস হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি কিন্তু ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে বিষয়টি জানানো হলে উনার দেয়া প্রণোদনায় আবার প্রান ফিরে পায় এই সমিতি।
বিজয়পুর ও আশেপাশের প্রায় সাতটি গ্রাম নিয়ে এই সমিতিটি গঠিত হয়। এখানে পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি মৃত শিল্পিদের প্রশিক্ষন ও দেয়া হয়।
কুমিল্লার সনামধণ্য এই প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে দেখা যায় শিল্পিরা তাদের দক্ষ হাতে মাটি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরী করছে। হাতের আলতো ছোয়াঁয় মাটিতে যেন প্রাণের সঞ্চার হচ্ছে। নিমিশেই তৈরী হচ্ছে ফুলদানী, টেরাকোটা, টব, কলমদানী, খাবারের পাত্র, টেবিল ল্যাম্প, ভাস্কর্য, বিভিন্ন পশু পাখির মূর্তীসহ ঘর সাজানোর বিভিন্ন সোপিস।
কুমিল্লা তথা দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষের মন জয় করে বিদেশের মাটিতে ও রয়েছে এখানকার পণ্যের চাহিদা। জাপান, কানাডা, হল্যান্ডসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে এখানকার পণ্য। এছাড়াও নারীদের কর্মসংস্থানেও ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে এই প্রতিষ্ঠানটি। এখানকার প্রায় ৭০ ভাগ কর্মচারী ই নারী। তবে বর্তমানে গ্যাস সংকটের কারনে তাদের ভবিষ্যত হুমকির মুখে পড়েছে।