আজ ১৩ই নভেম্বর, ২০২৪, সকাল ৭:১০

ইপিজেডের বিষাক্ত তরল বর্জ্যে অর্ধশত গ্রামের ফসল ও পরিবেশের ক্ষতির অভিযোগে স্মারকলিপি।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

নেকবর হোসেন কুমিল্লা প্রতিনিধি।

‘কুমিল্লা ইপিজেড এবং এর বাইরের দুইটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের রাসায়নিক (বিষাক্ত) তরল বর্জ্য আশপাশের অর্ধশতাধিক গ্রামের ফসলের জমি, খাল-বিল, নদী-নালা ও জলাশয়ের পানিতে মিশে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতির অভিযোগে স্মারকলিপি দাখিল করা হয়েছে। এতে বলা হয়, তরল বর্জ্যের কারণে জলজ উদ্ভিদ-মাছ মরে যাচ্ছে, কালো পানি থেকে ছড়াচ্ছে উৎকট গন্ধ। আগে কৃষি জমির পানিতে কাজ করলে শরীরে চুলকানি হতো, এখন পচন ধরে। কুমিল্লা নগরীর দক্ষিণ এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত অর্ধশতাধিক সমবায় সমিতির নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে রবিবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে কুমিল্লা নগর ভবন মিলনায়তনে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কুর নিকট স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন ওই এলাকার বাসিন্দা সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরী। এসময় তিনি কৃষকদের জমির ফসল ও লক্ষাধিক পরিবারের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এর প্রতিকারের দাবি জানান। অন্যথায় কুসিক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। স্মারকলিপিতে যাত্রাপুর গ্রামের বিশিষ্ট সমবায়ী মো. সিরাজুল ইসলাম ও দিশাবন্দ গ্রামের মো. আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষর করেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, দেড়শ বছরের পুরনো কুমিল্লা শহরের পয়ঃ ও পানি নিষ্কাষনের জন্য আজো স্যুয়ারেজ পদ্ধতি চালু হয়নি। সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ বছরেও জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগের নিরসন হয়নি। বর্তমানে এ শহরে প্রায় সাড়ে চার লাখ বাসিন্দা রয়েছে। এখানকার পয়ঃ ও পানি ৩টি খাল দিয়ে দক্ষিণের ডাকাতিয়া নদীতে প্রবাহিত হয়ে থাকে। দখল-দূষণে সরু হয়ে যাওয়া এসব খালের পানির সাথে ইপিজেডের বিষাক্ত রাসায়নিক তরল বর্জ্য দিশাবন্দ, ঢুলিপাড়া, কাজীপাড়া, উত্তর হীরাপুর, শ্রীবল্লভপুর, মোস্তফাপুর, গোপিনাথপুর, দক্ষিণ রামপুর, গোপালনগর, বামিশা, সাতবাড়িয়া, যশপুর, জয়পুর, কদমতলী, শাকতলা, নোয়াগাঁও, সুলতানপুর, দূর্গাপুর, লক্ষ্মীপুর, হোসেনপুর, নোয়াপাড়া, লোলবাড়িয়া, শ্রীনিবাস, উত্তর বিজয়পুর, ছনগাঁওসহ শহরের দক্ষিণাংশের অর্ধশতাধিক গ্রামের কৃষি জমি, খাল-বিল, নদী-নালা ও জলাশয়ের পানিতে মিশছে। এছাড়া দক্ষিণ দূর্গাপুর এলাকার সফিউল আলম স্টিল মিল ও বাতাবাড়িয়া এলাকার সামিট গ্রুপের বিদ্যুৎ প্রকল্পের বর্জ্য এসব এলাকার পানিতে মিশে একাকার হয়ে কৃষি জমির ফসল, গাছ-পালা, বাড়িঘর ও জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এছাড়াও বিষাক্ত বর্জ্যে জলজ উদ্ভিদ-মাছ মরে যাচ্ছে, কালো পানি থেকে ছড়াচ্ছে উৎকট গন্ধ। কৃষি শ্রমিকরা জমির পানিতে কাজ করলে শরীরে চুলকানি হতো, এখন পচন ধরে। এর প্রতিকার করা না গেলে শহরের দক্ষিণের অন্তত ৪০ কিলোমিটার এলাকার মানুষজনকে পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে।
স্মারকলিপি দাখিলকারী ও উপস্থিত ভূক্তভোগীদের আশ^স্ত করে কুসিক মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু বলেন, এ বিষয়ে শিগগির একটি কমিটি করা হবে। সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে সার্ভে করে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে এবং প্রতিকারের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হবে। তিনি আরো বলেন, নগরীর দক্ষিণের এলাকাবাসীর এ ক্ষতি ও ভোগান্তির জন্য ইপিজেড কর্তৃপক্ষ আমাদের (সিটি করপোরেশন) দায়ী করে থাকে। কিন্তু ইপিজেড প্রতিষ্ঠার শত বছর আগে থেকে এসব এলাকার কৃষকের জমিতে ফসল ফলেছে, তখনতো কোনো ক্ষতি হয়নি। তারা (ইপিজেড) বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন করলেও ২ ঘণ্টার বেশি কাজ করে না, বাকী বর্জ্য শোধন ছাড়াই ড্রেনে ছেড়ে দেয়ায় এমন ক্ষতি হচ্ছে বলেও তিনি দাবি করেন। এ ব্যাপারে ইপিজেড কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। তারা কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে তিনিও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ইপিজেডের পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে এর প্রতিকারের উদ্যোগ নেবেন বলেও ভূক্তভোগী এলাকার জনগণকে আশ^স্ত করেন।
কুমিল্লা ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ইপিজেডের কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে। এতে কারখানাগুলো কেন্দ্রীয়ভাবেই বর্জ্য পরিশোধনের সুযোগ পাচ্ছে। আমরা নিজেদের বর্জ্য নিজেরা নিয়ন্ত্রণে রাখি। তিনি আরো বলেন, কুমিল্লা শহরের পানি ও বর্জ্য ইপিজেডের পাশের বড় ড্রেন দিয়ে খালে প্রবাহিত হয়ে একাকার হয়। সিটি কর্তৃপক্ষ পানি প্রবাহের প্রক্রিয়া আরো উন্নত করলে পরিবেশ দূষণ কমে যাবে।
এদিন এর আগে সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে কুমিল্লা সিটি মেয়রের নিকট কুমিল্লা শহরের দক্ষিণের প্রবেশ ও নির্গমন সড়কের উন্নয়নে নির্বিঘ্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন এবং কুমিল্লা নগরীর টমছমব্রিজ থেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমিল্লা শহরের প্রবেশপথ নোয়াগাঁও চৌমুহনী থেকে নগরীর কান্দিরপাড় পূবালী চত্ত্বর অংশের স্থগিত হওয়া কাজ বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন কাজের দাবিতে সওজ কুমিল্লা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর নিকট পৃথক স্মারকলিপি দাখিল করা হয়।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০